ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার (Ovarian cancer)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

যে ক্যান্সার ডিম্বাশয়ে হয়ে থাকে তাকে ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার বলে। জরায়ুর দুই পাশে একটি করে মোট দুইটি ডিম্বাশয় থাকে। ডিম্বাশয়ের কাজ হল ডিম্বানু এবং এস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন নামক দুই ধরনের হরমোন তৈরি করা।

প্রথম পর্যায়ে ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার সাধারণত ধরা পড়ে না। তলপেটে ও পেটের অন্যান্য অংশে এই ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়লে এটি চিহ্নিত করা যায়। কিন্তু এই পর্যায়ে ক্যান্সার গুরুতর পর্যায়ে চলে যায় এবং এর চিকিৎসা করা খুবই কষ্টকর হয়ে পড়ে। এই ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে (যখন শুধুমাত্র ডিম্বাশয়কেই আক্রান্ত করে এবং ছড়িয়ে পড়ার আগে) থাকলে এর থেকে সেরে ওঠা সম্ভব। সাধারণত অপারেশন ও ক্যামোথেরাপির সাহায্যে এই ক্যান্সারের চিকিৎসা করা হয়।

কোন ধরনের কোষে ক্যান্সার প্রথম দেখা দেয় তার উপর ভিত্তি করে ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের প্রকারভেদ করা হয়। তিন ধরনের ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার দেখা যায়, যথা-

  • এপিথেলিয়াল টিউমারস (Epithelial Tumor) : এপিথেলিয়াল টিস্যুর পাতলা আবরণ দিয়ে ডিম্বাশয়ের বাইরের দিকটি আবৃত থাকে। এপিথেলিয়াল টিউমার এই টিস্যুতে হয়ে থাকে। ৯০ শতাংশ ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের কারণ হল এপিথেলিয়াল টিউমার।
  • স্ট্রোমাল টিউমারস (Stromal Tumors) : ডিম্বাশয়ের যে টিস্যু থেকে হরমোন তৈরি হয় তাতে স্ট্রোমাল টিউমার হয়ে থাকে। ডিম্বাশয়ের অন্যান্য টিউমারের তুলনায় এই টিউমারটি প্রথম পর্যায়েই চিহ্নিত করা যায়। প্রায় ৭ শতাংশ ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের কারণ হলো স্ট্রোমাল টিউমার।
  • জার্ম সেল টিউমারস (Germ Cell Tumors) : যে কোষ থেকে ডিম্বানু তৈরি হয় তাতে জার্ম সেল টিউমার হয়ে থাকে। এটি খুব বিরল প্রকারের ক্যান্সার যা তরুণীদের হয়ে থাকে।

কারণ

ঠিক কি কারণে ডিম্বাশয়ে ক্যান্সার দেখা দেয় তা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না।  সাধারণত সুস্থ ও স্বাভাবিক কোষগুলো জিনগত পরিবর্তনের মাধ্যমে ক্যান্সার কোষে পরিনত হয়। ক্যান্সার আক্রান্ত কোষগুলো খুব দ্রুত সংখ্যায় বৃদ্ধি পেতে  থাকে এবং টিউমার গঠন করে। এগুলো আশেপাশের টিস্যুতে ছড়িয়ে পড়ে এবং একটি টিউমার থেকে পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে (Metastasize)।

লক্ষণ

এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসকেরা নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি চিহ্নিত করে থাকেন:

চিকিৎসা

চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত ঔষধগুলি গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন:

bevacizumab cisplatin
dexamethasone etoposide
granisetron hydrochloride ifosfamide
mesna ondansetron hydrochloride
paclitaxel 5-Fluorouracil

চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত টেস্টগুলি করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন:    

বেটা এইচ-সি-জি (Beta-HCG)
ম্যামোগ্রাফি (Mammography)
সি-এ-১২৫ (CA-125)
ইউ-এস-জি-এল/এ (USG L/A)
এক্স-রে, চেস্ট পি-এ ভিউ (X-ray, Chest P/A view)
ইউরিন এনালাইসিস (Urinalysis)
এফ-এন-এ-সি (Fine needle aspiration cytology - FNAC)

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

বিভিন্ন কারণে ডিম্বাশয়ে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকির পরিমাণ বাড়তে পারে।  ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলো হল:

  •  ৫০-৬০ বছরের মধ্যে মহিলাদের এ রোগের ঝুঁকি বেশি থাকে।
  • জন্মগত বা বংশগতভাবে পাওয়া জিনগত পরিবর্তনের ফলে ডিম্বাশয়ে ক্যান্সার হতে পারে। তবে এর সংখ্যা খুব কম। যে সকল জিনের কারণে ডিম্বাশয়ে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে সেগুলো হল ব্রেস্ট ক্যান্সার জিন 1 বা BRCA1 (Breast cancer gene 1) এবং ব্রেস্ট ক্যান্সার জিন 2 বা BRCA2 (Breast cancer gene 2)। এই জিনগুলো বংশগত কারণে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে থাকতে পারে যার ফলে ব্রেস্ট ক্যান্সার দেখা দেয়।

জিনের এই পরিবর্তনের জন্য লিঞ্চ সিন্ড্রম (Lynch Syndrome) দেখা দেয়, যা কোলন ক্যান্সারের সাথে সম্পর্কিত এবং একই সাথে এটি মহিলাদের মধ্যে ডিম্বাশয়ে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।

  • এস্ট্রোজেন হরমোন প্রয়োগের জন্য থেরাপি দেওয়া হলে তা এ রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • মাসিক শুরু হওয়ার বয়সে ও শেষ হওয়ার সময় এই ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। যদি কোনো মেয়ের বারো বছর বয়সে মাসিক শুরু হয় এবং বায়ান্ন বছরের পরে মেনোপোজ হয়  তবে ডিম্বাশয়ে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
  • যেসব মহিলা কখনো গর্ভবতী হয় নি বা সন্তান জন্ম দেয় নি তাদের ক্ষেত্রের এ ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
  • বন্ধাত্ব্য দূর করার জন্য যে চিকিৎসা করা হয় তা এ ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • ধূমপান ডিম্বাশয়ে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
  • ইন্ট্রা-ইউটেরাইন ডিভাইস (Intrauterine device) যেমন কপার-টি এর ব্যবহার এ রোগের বেড়ে যায়।
  • পলিসিস্টিক অভারি সিন্ড্রোম (Polycystic ovary syndrome) এর ফলে এ রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গঃ মহিলাদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে।

জাতিঃ শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে।  হিস্প্যানিকদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ২ গুণ কম। কৃষ্ণাঙ্গ ও অন্যান্য জাতির মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা  একগুণ কম।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তর: এটা অবশ্যই ভালো কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে মহিলাদের মধ্যে প্রথমদিকেই এই ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য কোনো স্ক্রিনিং টেস্ট (Screening Test) এর ব্যবস্থা নেই।

হেলথ টিপস্‌

ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার প্রতিরোধের কোনো সুনির্দিষ্ট ও নিশ্চিত উপায় নেই। তবে কিছু বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখলে এই ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। যেমনঃ

  • জন্মবিরিতিকরণ পিল ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, বিশেষ করে যারা দশ বছরের বেশি সময় ধরে এটি বব্যবহার করে আসছে।
  • দেখা গেছে, যেসব মহিলা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ান তাদের এ রোগের ঝুঁকি কম থাকে।
  • Aspirin বা ব্যাথানাশক ঔষধ কম খেতে হবে।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তার

ডাঃ সৈয়দা আয়েশা সিদ্দিকা

গাইনি ও অবসটেট্রিক্স ( Obstetrics & Gynaecology)

এমবিবিএস(ঢাকা), এফসিপিএস(গাইনী এন্ড অবস), এফসিপিএস(গাইনী এন্ড অবস)

ডাঃ কাজী তাসলিমা

গাইনি ও অবসটেট্রিক্স ( Obstetrics & Gynaecology)

এমবিবিএস, বিসিএস(স্বাস্থ্য), এমসিপিএস, এফসিপিএস(অব্স‌ এন্ড গাইনী), এমআরসিওজি

অধ্যাপক ডাঃ শিশির কে. দত্ত

গাইনি ও অবসটেট্রিক্স ( Obstetrics & Gynaecology)

এমডি(ইউএসএ), , এফআরসিএস(কানাডা), , এমআরসিওজি(লন্ডন),

সহকারী অধ্যাপক ডাঃ রিফাত আরা

গাইনি ও অবসটেট্রিক্স ( Obstetrics & Gynaecology)

এমবিবিএস, এফিপিএস, এমএস(গাইনী এন্ড অবস)

ডাঃ আফরোজা সুলতানা

গাইনি ও অবসটেট্রিক্স ( Obstetrics & Gynaecology)

এমবিবিএস, ডিজিও, এমসিপিএস, এফসিপিএস (গাইনী এন্ড অবস)

অধ্যাপক ডাঃ মুন্নুজান বেগম

গাইনি ও অবসটেট্রিক্স ( Obstetrics & Gynaecology)

এমবিবিএস(ঢাকা), , এফসিপিএস(গাইনী এন্ড অব্‌স)

ডাঃ নিলুফার নাসরিন (আভা)

গাইনি ও অবসটেট্রিক্স ( Obstetrics & Gynaecology)

এমবিবিএস, ডিজিও, এমসিপিএস, এফসিপিএস

ডাঃ আনজুমান আরা

গাইনি ও অবসটেট্রিক্স ( Obstetrics & Gynaecology)

এমবিবিএস(ঢাকা), এফসিপিএস(গাইনী), এমএস(গাইনী)