ঠাণ্ডায় কাঁপুনি (Chills)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

কখনও কখনও গরম পোশাক পরার পরও অতিরিক্ত শীত অনুভুত হয়, ঠান্ডায় কাঁপুনি বা শিরশির অনুভূত হয় এবং শরীর ফ্যাকাশে হয়ে যায়। সাধারণত জ্বরের কারণে এমনটি হয়ে থাকে। শরীরে কোনো ইনফেকশন বা প্রদাহের কারণে জ্বর হয়ে থাকে।

শরীরের কোনো অংশে ইনফেকশন দেখা দিলে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় ও জ্বর হয়। জ্বরের সময় পেশী দ্রুত সংকোচন-প্রসারণের জন্য ঠাণ্ডায় কাঁপুনি হয়। যেকোনো কারণে জ্বর ও ঠাণ্ডায় কাঁপুনি হতে পারে। যেমন সাধারণ সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ম্যালেরিয়া ও মেনিঞ্জাইটিস। প্রfপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের এ সমস্যা বেশি দেখা দেয়।

অতিরিক্ত ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় দেহের তাপমাত্রা কমে যায়। তাই দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে মাংসপেশী খুব দ্রুত সংকুচিত ও প্রসারিত হয়, ফলে শরীরে কাঁপুনি ধরে। অটোইমিউন ও ইনফ্লামেটরি ডিজঅর্ডার, এমনকি ক্যান্সারের কারণেও এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। গুরুতর ইনফেকশন বা হাইপোরামিয়ার একটি লক্ষণ হলো শরীরে কাঁপুনি অনুভূত হওয়া। তাই এই লক্ষণ দেখা দিলে রোগীকে যতো দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

কারণ

বিভিন্ন কারণে এই লক্ষণ দেখা যেতে পারে, যেমন:   

শ্বেতরক্ত কণিকা সম্পর্কিত রোগ (White blood cell disease) অ্যাপেন্ডিসাইটিস (Appendicitis)
সাধারণ সর্দি-কাশি (Common cold) ভ্যালে ফিভার (Valley fever)
গলার ইনফেকশন (Strep throat) এন্ডোমেট্রিয়োসিস (Endometriosis)
ফ্লু (Flu) পেরিটনসিলার অ্যাবসেস (Peritonsillar abscess)
এন্ডোকার্ডাইটিস (Endocarditis) কোলিডোকোলিথায়াসিস (Choledocholithiasis)
হিট স্ট্রোক (Heat stroke) ইশকেমিয়া অফ দি বাওয়েল (Ischemia of the bowel)
টেস্টিকুলার ক্যান্সার (Testicular cancer) মাল্টিপল মায়েলোমা (Multiple myeloma)
মায়েলোডিসপ্লাস্টিক সিন্ড্রোম (Myelodysplastic syndrome) অ্যাড্রেনাল ক্যান্সার (Adrenal cancer)
লিম্ফোগ্রেনুলোমা ভেনেরিয়াম (Lymphogranuloma venereum) নন-ইনফেকশস গ্যাস্ট্রোয়েন্টেরাইটিস (Noninfectious gastroenteritis)
লাইম ডিজিজ (Lyme disease) অ্যানিমিয়া অফ ক্রনিক ডিজিজ (Anemia of chronic disease)
নিউমোনিয়া (Pneumonia)

সংশ্লিষ্ট লক্ষণসমূহ

এই লক্ষণের সাথে অন্যান্য যেসকল লক্ষণ দেখা যেতে পারে সেগুলো হলোঃ

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গঃ পুরুষ ও মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে।

জাতিঃ শ্বেতাঙ্গ, হিস্প্যানিক ও অন্যান্য জাতির ক্ষেত্রে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। অপরদিকে, কৃষ্ণাঙ্গদের ক্ষেত্রে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা একগুণ কম।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তরঃ জ্বরের সময় শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে ঠান্ডায় কাঁপুনি হয় এবং এটি সাধারণত তাপমাত্রা বৃদ্ধির পূর্বেই দেখা দেয়। আবার বাইরের আবহাওয়ার তাপমাত্রার প্রভাবেও শরীরে কাঁপুনি হতে পারে। এ অবস্থায় হালকা গরম পানিতে গোসল করলে আরামবোধ হতে পারে ও কাঁপুনি কমতে পারে।

উত্তরঃ কখনও কখনও কাঁপুনি ছাড়াও জ্বর হয়ে থাকে।

উত্তরঃ দুশ্চিন্তার কারণেও শরীরে কাঁপুনি হতে পারে। দুশ্চিন্তার সময় হরমোনের প্রভাবে ত্বকের বিভিন্ন স্তরে পরিবর্তন দেখা দেয় যার ফলে শরীরে কাঁপুনি হয়। অনেকে এ সময় শিউরে ওঠে বা গায়ে কাঁটা দেয়।

হেলথ টিপস্‌

কাঁপুনিসহ জ্বর দেখা দিলে ঘরোয়া পদ্ধতিতেই এর চিকিৎসা করা সম্ভব। তবে এটি জ্বরের তীব্রতার উপর নির্ভর করে। জ্বর ১০২° বা এর কম হলে এবং এর সাথে অন্যকোনো লক্ষণ দেখা না দিলে প্রচুর পরিমাণে তরল ও তরলজাতীয় খাবার খেতে হবে ও বিশ্রাম নিতে হবে। সাধারণত এ অবস্থায় ডাক্তার দেখানোর প্রয়োজন হয় না। একইসাথে কম্বল ও জামাকাপড়ের সাহায্যে শরীর ভালোভাবে ঢেকে রাখতে হবে। হালকা গরম পানি দিয়ে শরীর মুছলে বা গোসল করলে তা জ্বর কমাতে সাহায্য করে। ঠান্ডা পানির সংস্পর্শে আসলে আবার শরীরে কাঁপুনি হতে পারে।

শিশুদের ক্ষেত্রে জ্বর ১০৩.৫° বা এর বেশি হলে কাঁপুনি কমাতে গরম পানি দিয়ে গোসল করাতে হবে। তবে এ অবস্থায় শিশুকে ভারী কম্বল বা ভারী জামাকাপড় পরানো উচিত নয়। যতটা সম্ভব শিশুকে হালকা জামাকাপড় পরাতে হবে ও প্রচুর পরিমানে পানি ও তরলজাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে। ১৮ বছর বয়সের নীচে ছেলে-মেয়েদের কখনই অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ দেওয়া যাবে না। কেননা এতে রেইস সিন্ড্রোম (Reye’s syndrome) দেখা দেওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।