ইশকেমিক হার্ট ডিজিজ (Ischemic heart disease)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

এটি মায়োকার্ডিয়াল ইশকেমিয়া নামেও পরিচিত। যখন করোনারী আর্টারীর (হৃদযন্ত্রের ধমনী) কোনো অংশ বা সম্পূর্ণ অংশ বন্ধ বা ব্লক হয়ে যায় তখন হৃদপেশিতে রক্ত প্রবাহ কমে যায়। একে মায়োকার্ডিয়াল ইশকেমিয়া বলে। রক্ত প্রবাহ কমে গেলে হৃদপিণ্ডে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়।

মায়োকার্ডিয়াল ইশকেমিয়ার আর একটি নাম হলো কার্ডিয়াক ইশকেমিয়া, যা হৃদপেশির ক্ষতি করে এবং এর ফলে পাম্পের ক্ষমতা কমে যায়। হঠাৎ করে করোনারী আর্টারী ব্লক হয়ে গেলে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। মায়োকার্ডিয়াল ইশকেমিয়ার ফলে হৃদস্পন্দন মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়।

মায়োকার্ডিয়াল ইশকেমিয়ার চিকিৎসা হল হৃদপেশীতে রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি করা। এর জন্য ঔষধ খেতে হবে এবং প্রয়োজনে করোনারী আর্টারী বাইপাস অপারেশন করাতে হবে।

কারণ

যখন এক বা একাধিক করোনারী আর্টারী বন্ধ বা ব্লক হয়ে যায় এবং হৃদপেশীতে রক্তপ্রবাহ কমে যায় তখন মায়োকার্ডিয়াল ইশকেমিয়া হয়। এর ফলে হৃদপেশীতে রক্তপ্রবাহ কমে যায়। যখন আর্টারী বা ধমনী ধীরে ধীরে বা হঠাৎ করে ব্লক হয়ে যায় তখন মায়োকার্ডিয়াল ইশকেমিয়া হয়।

যেসব কারণে মায়োকার্ডিয়াল ইশকেমিয়া হয়ে থাকে তা হলোঃ

  • করোনারী আর্টারি ডিজিজ (অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস) (Coronary artery disease (Atherosclerosis))
  • ব্লাড ক্লট বা রক্ত জমাট বাঁধা (Blood clot)
  • করোনারী আর্টারী স্পাজম (Coronary artery spasm)

নিম্নলিখিত কারণে বুক ব্যথার সাথে সাথে মায়োকার্ডিয়াল ইশকেমিয়া হয়ে থাকেঃ

  • শারীরিক পরিশ্রম
  • মানসিক চাপ
  • কম তাপমাত্রা।
  • কোকেইনের ব্যবহার।

লক্ষণ

এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসকেরা নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি চিহ্নিত করে থাকেন:

চিকিৎসা

 চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত ঔষধগুলি গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন: 

amlodipine aspirin
atenolol atorvastatin
bisoprolol captopril
carvedilol clopidogrel bisulphate
enalapril maleate glyceryl trinitrate
lisinopril losartan potassium
nifedipine phenobarbitone

চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত টেস্টগুলি করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন: 

করোনারী অ্যানজিওগ্রাম (Coronary Angiogram, CAG)
ব্লাড গ্লুকোজ, ফাস্টিং (Blood Glucose, Fasting)
লিপিড প্রোফাইল (Lipid profile)
সি-বি-সি (কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট) (CBC, Complete Blood Count)
ই-টি-টি (এক্সারসাইজ টলারেন্স টেস্ট) (Exercise Tolerance Test, ETT)
ইকো কার্ডিওগ্রাম ২ডি (Echo cardiogram 2D)
ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম (ই-সি-জি) (Electrocardiogram, ECG)
কার্ডিয়াক ইনফার্ক্ট স্ক্যানিং (Cardiac Infarct Scanning)

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

নিম্ললিখিত বিষয়ের কারণে মায়োকার্ডিয়াল ইশকেমিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়ঃ

  • টোবাকো ব্যবহার (Tobacco): ধূমপান করলে বা ধূমপায়ীর সাথে থাকলে হৃদপিণ্ডের ধমনীর অভ্যন্তরীণ আবরণ ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং আবরণে কোলেস্টেরল এবং অন্যান্য পদার্থ জমা হয়ে রক্তপ্রবাহের গতি কমিয়ে দেয়। ধূমপান করলে ধমনীতে রক্ত জমাট বাঁধে এবং তার ফলে মায়োকার্ডিয়াল ইশকেমিয়া হয়ে থাকে।
  • ডায়াবেটিস (Diabetes): ডায়াবেটিস হলো এমন একটি অবস্থা যখন শরীর সঠিকভাবে ইনসুলিন উৎপন্ন করতে পারে না। ইনসুলিন হলো এক ধরনের হরমোন যা অগ্ন্যাশয় হতে উৎপন্ন হয় এবং খাদ্যের গ্লুকোজ শোষন করতে সাহায্য করে। টাইপ- ১ ও টাইপ- ২ ডায়াবেটিস, মায়োকার্ডিয়াল ইশকেমিয়া, হার্ট অ্যাটাক এবং হার্টের অন্যান্য অসুখের সাথে সম্পর্কযুক্ত।
  • উচ্চ রক্তচাপ (High blood pressure): দীর্ঘদিন যাবৎ উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা হৃদপিণ্ডের ধমনীর ক্ষতি করে। যারা খুব মোটা তাদের উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অতিরিক্ত লবণ খেলেও উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে।
  • রক্তে কোলেস্টেরল বা ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বৃদ্ধি (High blood cholesterol or triglyceride levels): কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে ধমনী সরু হয়ে যায়। রক্তে কোলেস্টোরলের মাত্রা বৃদ্ধি হলে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস বা মায়োকার্ডিয়াল ইশকেমিয়া হতে পারে। এল-ডি-এল (LDL)( Low-density lipoprotein)-এর মাত্রা বেড়ে গেলে এই রোগটি হতে পারে। এর ফলে হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে।
  • শারীরিক পরিশ্রম কম করা (Lack of physical activity): অলস জীবনযাপনকারী ব্যক্তিরা খুব সহযেই মোটা হয়ে যায় এবং সাথে সাথে তাদের রক্তে কোলেস্টেরল বা ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেড়ে যায়। এর ফলে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস হতে পারে। যারা প্রতিদিন ব্যায়াম করে তাদের কার্ডিওভাস্কুলার ফিটনেস ভাল থাকে এবং এর সাথে হার্ট অ্যাটাক এবং মায়োকার্ডিয়াল ইশকেমিয়া হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। ব্যায়াম করলে উচ্চ রক্তচাপের সম্ভাবনা কমে যায়।
  • স্থূলতা (O‌besity): অতিরিক্ত মোটা ব্যক্তিদের মায়োকার্ডিয়াল ইশকেমিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
  • কোমরের মাপ (Waist circumference): যেসব মহিলাদের কোমরের মাপ ৩১ ইঞ্চির (৮০ সেন্টিমিটার) বেশি এবং যেসব পুরুষদের কোমরের মাপ ৩৫ ইঞ্চির (৯০ সেন্টিমিটার) বেশি তাদের হার্ট ডিজিজ হতে পারে। এছাড়া কোনো ব্যক্তির পরিবারের যদি কারো করোনারী হার্ট ডিজিজ থাকে তাহলে তারো মায়োকার্ডিয়াল ইশকেমিয়া হতে পারে।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গঃ পুরুষদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। মহিলাদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

জাতিঃ হিস্প্যানিকদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ১ গুণ কম। কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ২ গুণ কম। শ্বেতাঙ্গ এবং অন্যান্য জাতির মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তরঃ ইশকেমিয়া্র ফলে হৃৎপিণ্ডের ধমনী ব্লক বা বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। এর চিকিৎসা প্রায়ই ঔষধের সাহায্যে করা হয়ে থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাইপাস অপারেশনের প্রয়োজন হয়।

উত্তরঃ রক্ত প্রবাহ বন্ধের মাধ্যমে করোনারী আর্টারী ডিজিজ থেকে মায়োকার্ডিয়াল ইশকেমিয়া হতে পারে। তরুণ অবস্থায় রক্ত নালীর আবরণ পরিষ্কার ও মসৃণ থাকে। সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন কারণে করোনারী আর্টারী পিণ্ডময় বা কোলেস্টেরলের কারণে বন্ধ হয়ে যেতে থাকে। একে অ্যাথেরোস্ক্লেরেটিক প্লাক (Atherosclerotic  plaque) বলে। এর ফলে রক্তপ্রবাহ কমে যায় যার ফলে ইশকেমিয়া (Oxygen deprivation) হয়ে থাকে।

হেলথ টিপস্‌

দৈনন্দিন জীবনযাত্রার অভ্যাসগত পরিবর্তনের মাধ্যমে মায়োকার্ডিয়াল ইশকেমিয়া প্রাথমিক অবস্থায় প্রতিরোধ করা সম্ভব। সুস্থ জীবনযাপনের মাধ্যমে আর্টারী বা ধমনী শক্তিশালী, স্থিতিস্থাপক বা ইলাস্টিক, মসৃণ এবং রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখা সম্ভব। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে হলে নিম্নলিখিত পন্থা মেনে চলতে হবে:

  • ধূমপায়ীর সংস্পর্শ ও ধূমপান করা বা তামাক খাওয়া পরিহার করতে হবে।
  • উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
  • ব্যায়াম করতে হবে।
  • কম চর্বি ও কম লবণযুক্ত খাবার খেতে হবে।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
  • মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তার

ডাঃ মোঃ নিজাম উদ্দিন

কার্ডিওলজি ( হার্ট) ( Cardiology)

এমবিবিএস, বিসিএস(স্বাস্থ্য), পিএইচডি(কার্ডিওলজি)

প্রফেসর ডাঃ ইউ এইচ নাসেরা বেগম

কার্ডিওলজি ( হার্ট) ( Cardiology)

এমবিবিএস (ঢাকা), এমডি (কার্ডিওলজি ডি ইউ)

প্রফেসর ডাঃ সুফিয়া রহমান

কার্ডিওলজি ( হার্ট) ( Cardiology)

এমবিবিএস(ঢাকা), এমআরসিপি(যুক্তরাজ্য), এফআরসিপি(এডিন), এফএসিসি(যুক্তরাষ্ট্র), এফসিসিপি(যুক্তরাষ্ট্র), ডিপ্লোমা কার্ডিওলজী(লন্ডন), এফসিপিএস(কার্ডিওলজী), এফআরসিপি(যুক্তরাজ্য), এফএসসিএআই

অধ্যাপক ডাঃ মোহাম্মদ সাইফ উল্লাহ

মেডিসিন ( Medicine), কার্ডিওলজি ( হার্ট) ( Cardiology)

এমবিবিএস, এমডি(কার্ডিওলজী), এফএসিসি(লন্ডন)

ডাঃ শেখ মোঃ ইউনুস আলী

মেডিসিন ( Medicine), কার্ডিওলজি ( হার্ট) ( Cardiology)

এমবিবিএস(ঢাকা), বিসিএস(স্বাস্থ্য), ডি-কার্ড(কার্ডিওলজী), এফসিপিএস(মেডিসিন)

ডাঃ মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান

কার্ডিওলজি ( হার্ট) ( Cardiology)

এমবিবিএস, ডি-কার্ড, এমএসিই(আমেরিকা), সার্টিফাইড ডায়াবেটোলজিস্ট, ট্রেইন্ড ইন ইকো

ডাঃ মোহাম্মদ উল্লাহ্‌ ফিরোজ

মেডিসিন ( Medicine), কার্ডিওলজি ( হার্ট) ( Cardiology)

এমবিবিএস, এমডি(কার্ডিওলজী), এফসিপিএস(মেডিসিন)

ডাঃ তওফিক শাহরিয়ার হক

কার্ডিওলজি ( হার্ট) ( Cardiology)

এমবিবিএস, ডি-কার্ড, এমডি(কার্ডিওলজী)