থ্যালাসেমিয়া (Thalassemia)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

থ্যালাসেমিয়া (Thalassemia) হল রক্তের এক ধরনের বংশগত অস্বাভাবিকতা/সমস্যা। থ্যালামেসিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তে হিমোগ্লোবিন ও লোহিত রক্ত কোষের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় কম থাকে। থ্যালাসেমিয়া বিভিন্ন ধরনের হয় থাকে, যেমন- আলফা থ্যালাসেমিয়া ( alpha-thalassemia), বেটা থ্যালাসেমিয় ইন্টারমিডিয়া ( beta-thalassemia intermedia), কুলি’স অ্যানিমিয়া ( Cooley's anemia) এবং মেডিটেরিয়ান অ্যানিমিয়া ( Mediterranean anemia) ইত্যাদি।

হিমোগ্লোবিন হলো  লোহিত রক্তকোষে বিদ্যমান এক ধরনের উপাদান, যা লোহিত রক্তকোষগুলিকে অক্সিজেন বহনে সাহায্য করে। হিমোগ্লোবিন ও লোহিত রক্ত কোষের অভাবের কারণে অ্যানিমিয়া হতে পারে, এবং  এজন্য আক্রান্ত ব্যক্তি দুর্বলবোধ করতে পারেন।

থ্যালাসেমিয়ার মাত্রা কম হলে আপনার চিকিৎসার প্রয়োজন নাও হতে পারে। তবে থ্যালাসেমিয়া তীব্র আকার ধারণ করলে নিয়মিত রক্ত গ্রহণের (ব্লাড ট্রান্সফিউশন) প্রয়োজন হয়। স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যগ্রহণ ও নিয়মিত ব্যায়াম করার মাধ্যমে আপনি নিজে থেকে থ্যালাসেমিয়জনিত ক্লান্তি দূর করতে পারেন।

কারণ

হিমোগ্লোবিন সৃষ্টিকারী কোষগুলির ডি-এন-এ তে(DNA) পরিবর্তনের (মিউটেশন) কারণে থ্যালাসেমিয়া হয়। থ্যালাসেমিয়ার সাথে সম্পর্কযুক্ত মিউটেশন পিতা-মাতা থেকে সন্তানদের মধ্যে সঞ্চারিত  হতে পারে।

থ্যালাসেমিয়া সৃষ্টিকারী মিউটেশনের কারণে হিমোগ্লোবিনের উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং উচ্চ হারে লোহিত রক্তকোষ ধ্বংস হয়। এ জন্যই অ্যানিমিয়া দেখা দেয়। অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তে শরীরের টিস্যুগুলিতে অক্সিজেনবহনকারী লোহিত রক্ত কোষের অভাব দেখা দেয়, ফলে তিনি দুর্বলবোধ করেন।

থ্যালাসেমিয়ার প্রকার ভেদ

পিতা-মাতা থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে আপনার জিনে কতোবার পরিবর্তন হয়েছে, এবং হিমোগ্লোবিন এর কোন অংশ মিউটেশনের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে, তার উপর নির্ভর করছে আপনি কোন ধরনের থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। জিনের পরিবর্তন যতো বেশি হবে, থ্যালাসেমিয়া ততো তীব্র আকার ধারন করবে। হিমোগ্লোবিন এর আলফা ও বিটা অংশ এই মিউটেশন দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

আলফা থ্যালাসেমিয়া

আলফা হিমোগ্লোবিন চেইন সৃষ্টির সাথে চারটি জিন সম্পর্কযুক্ত। প্রত্যেক ব্যক্তি বাবার কাছ থেকে দুটি ও মায়ের কাছ থেকে দুটি জিন পেয়ে থাকে। একজন ব্যক্তি যদি-

একটি পরিবর্তিত জিন পেয়ে থাকেন, তাহলে তার শরীরে থ্যালাসেমিয়ার কোনো লক্ষণ দেখা দেবে না। তবে এক্ষেত্রে সেই ব্যক্তি রোগটির বহনকারী, এবং তার শরীর থেকে সন্তানের মধ্যে রোগটি সঞ্চারিত হতে পারে।

দুটি পরিবর্তিত জিন পেয়ে থাকেন, স্বল্পাকারে থ্যালাসেমিয়ার লক্ষণ দেখা দেবে। এই অবস্থাটিকে আলফা-থ্যালাসেমিয়া মাইনর বা আলফা-থ্যালাসেমিয়া ট্রেইট বলা হয়ে থাকে।

তিনটি পরিবর্তিত জিন পেয়ে থাকলে, লক্ষণগুলি মাঝারি থেকে তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। এই অবস্থাকে হিমোগ্লোবিন এইচ ডিজিজও বলা হয়।

চারটি পরিবর্তিত জিন পেয়ে থাকলে এই অবস্থাকে আলফা-থ্যালাসেমিয়া মেজর বলা হয়। সাধারণত এই অবস্থার কারণে প্রসবের আগেই ভ্রণ অথবা জন্মের পরপরই নবজাতকের মৃত্যু হয়।

বেটা-থ্যালাসেমিয়া

বেটা হিমোগ্লোবিন চেইন সৃষ্টির সাথে দুটি জিন সম্পর্কযুক্ত। প্রত্যেক ব্যক্তি বাবা বা মায়ের কাছ থেকে দুটি জিন পেয়ে থাকে। একজন ব্যক্তি যদি-

একটি পরিবর্তিত জিন পেয়ে থাকেন, তাহলে থ্যালাসেমিয়ার লক্ষণ স্বল্পাকারে দেখা দেবে। এই অবস্থাকে বেটা থ্যালাসেমিয়া মাইনর বা বেটা-থ্যালাসেমিয়া ট্রেইট বলে।

দুটি পরিবর্তিত জিন পেয়ে থাকেন, তবে লক্ষণগুলি মাঝারি থেকে তীব্র আকার ধারণ করে। এই অবস্থাকে বেটা-থ্যালাসেমিয়া মেজর বা কুলি’স অ্যানিমিয়া বলা হয়। দুটি সমস্যাযুক্ত বেটা হেমোগ্লোবিন জিন নিয়ে জন্মগ্রহণ করা শিশুরা জন্মের সময় স্বাস্থ্যবান থাকে, কিন্তু জন্মের পর দুই বছরের মধ্যে তাদের শরীরে থ্যালাসেমিয়ার লক্ষণ দেখা দেয়। দুটি পরিবর্তিত জিনের কারণে অল্প মাত্রার বেটা-থ্যালাসেমিয়া ইন্টারমিডিয়া দেখা দেয়।

লক্ষণ

এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসকেরা নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি চিহ্নিত করে থাকেন:

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

নিম্নলিখিত বিষয়গুলি থ্যালাসেমিয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে:

  • পরিবারে থ্যালাসেমিয়া থাকা: আপনার বংশ/পরিবারে কেউ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হলে আপনার এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
  • নির্দিষ্ট জাতির অন্তর্ভুক্ত হওয়া: ইটালিয়ান, গ্রীক, এশিয় ও আফ্রিকার জনগোষ্ঠীর মানুষদের থ্যালাসেমিয়া বেশি হয়।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গ:  নারীদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা থাকে। পুরুষদের মধ্যে এই বয়সের ব্যক্তিদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

জাতি:  কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার গড়পরতা সম্ভাবনা থাকে। শ্বেতাঙ্গ ও হিস্প্যানিকদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম। অন্যান্য জাতির মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার সম্ভাবনা ৪ গুণ বেশি।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তরঃ সমগ্র বিশ্বেই থ্যালাসেমিয়া অন্যতম জি্নের পরিবর্তনজনিত রোগ। সামগ্রিকভাবে ২০-২৫ মিলিয়ন মানুষ এটি বহন করে।

কম ঝুঁকিতে আছে: জাপানি, কোরিয়ান, ইউরোপিয় ককেশিয়ান, নেটিভ অ্যামেরিকান।

উচ্চ ঝুঁকিতে আছে:  ভূমধ্যসাগরিয় অঞ্চলের মানুষ, দক্ষিণ এশিয়, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, ক্যারিবিয়ান।

উত্তরঃ একমাত্র অ্যালোজেনিক বোন ম্যারো ট্রান্স প্লানটেশনের (allogeneic bone marrow transplantation) মাধ্যমেই  থ্যালাসেমিয়ার নিরাময় সম্ভব। তবে ব্লাড ট্রান্সফিউশন, আয়রন কিলেটিং এজেন্ট এবং আরও কিছু চিকিৎসার মাধ্যমে আয়রন বৃদ্ধিজনিত সমস্যা প্রশমিত করা যায়্। থ্যালাসেমিয়া মাইনর বা ট্রেইটের জন্য বিশেষ কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। এ বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

হেলথ টিপস্‌

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। আপনি যদি থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হন বা থ্যালাসেমিয়ার জিন বহন করেন, তাহলে সম্তান জন্মদানের পূর্বে জিন-বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তার

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অধ্যাপক ডাঃ এ.কে মোঃ মোস্তফা আবেদিন (অবঃ)

হেমাটোলজি ( ব্লাড) ( Hematology)

এমবিবিএস, এমসিপিএস, এফসিপিএস(হেমাটোলজী)

ডাঃ মোঃ রফিকুজ্জামান খাঁন

হেমাটোলজি ( ব্লাড) ( Hematology)

এমবিবিএস, ডিসিপি, এফসিপিএস(হেমাটোলজি)

লেঃ কর্ণেল ডাঃ মোঃ মোস্‌লেহ উদ্দিন

হেমাটোলজি ( ব্লাড) ( Hematology)

এমবিবিএস, ডিসিপি, এমসিপিএস, এফসিপিএস(হেমাটোলজী)

ব্রিগেঃ জেনারেল ফারুক আহমেদ

ক্লিনিকাল প্যাথোলজি ( Clinical Pathology), হেমাটোলজি ( ব্লাড) ( Hematology)

এমবিবিএস, এমসিপিএস(ক্লিনিক্যাল প্যাথ), এফসিপিএস(হেমাটোলজী)

ডাঃ অখিল রঞ্জন বিশ্বাস

হেমাটোলজি ( ব্লাড) ( Hematology)

এমবিবিএস , এফসিপিএস(হেমাটোলজি)

ডাঃ মোঃ মনিরুল ইসলাম

হেমাটোলজি ( ব্লাড) ( Hematology)

এমবিবিএস, এফসিপিএস(হেমাটোলজি)

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অধ্যাপক ডাঃ মুন্সী মজিবুর রহমান

কার্ডিওলজি ( হার্ট) ( Cardiology), হেমাটোলজি ( ব্লাড) ( Hematology)

এমবিবিএস, , এমসিপিএস, , এফসিপিএস, , এফআইসিএস

অধ্যাপক ব্রিগেঃ জেনাঃ ফারুক আহম্মেদ(অবঃ)

হেমাটোলজি ( ব্লাড) ( Hematology)

এমবিবিএস, এমসিপিএস(ক্লিনিক্যাল প্যাথলজি), এফসিপিএস(হেমাটলজি)