পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার (Post-traumatic stress disorder)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

পোস্ট ট্রম্যাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার একটি মানসিক রোগ। একজন ব্যক্তির আতঙ্কজনক কোনো ঘটনার অভিজ্ঞতা থাকলে তিনি এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। ফ্ল্যাশব্যাক (flashback), দুঃস্বপ্ন, তীব্র বিষণ্নতা এবং আতঙ্কজনক ঘটনা সম্পর্কে অনিয়ন্ত্রিত চিন্তা এই রোগটির লক্ষণ হিসেবে দেখা দেয়।

প্রচণ্ড মানসিক আঘাত (ট্রমা) পাওয়ার পর অনেক ব্যক্তির স্বাভাবিক মানসিক অবস্থায় ফিরে আসতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। এসব ব্যক্তিরা পোস্ট ট্রম্যাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত হয় না। তবে লক্ষণগুলি আরও তীব্র আকার ধারণ করে, অথবা কয়েক মাসব্যাপী বা বছরব্যাপী স্থায়ী হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটালে পোস্ট ট্রম্যাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

কার্যকর চিকিৎসার মাধ্যমে পোস্ট ট্রম্যাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারের লক্ষণগুলি প্রশমিত করা সম্ভব।

কারণ

কোনো ব্যক্তি যদি অন্য কোনো ব্যক্তির মৃত্যু, মারাত্মক আঘাত বা যৌন নিপীড়নের মতো আতঙ্কজনক ঘটনা সচক্ষে দেখেন বা সেগুলি সম্পর্কে শোনেন, তাহলে তিনি পোস্ট ট্রম্যাটিক স্ট্রেস ডিজওর্ডারে আক্রান্ত হতে পারেন। এছাড়া কোনো ব্যক্তি আতঙ্কজনক কোন ঘটনার শিকার হলেও তার পোস্ট ট্রম্যাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার হতে পারে।

কিছু কিছূ ব্যক্তি কেনো এই রোগে আক্রান্ত হয়, সে ব্যাপারে গবেষকরা এখনো সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিত নয়। তবে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি রোগটির সম্ভাব্য কারণ হতে পারে:

  • বংশগতভাবে মানসিক সমস্যার ঝুঁকি থাকা।
  • শৈশব থেকে মানসিক আঘাত পাওয়ার অভিজ্ঞতা।
  • বংশগত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।
  • মানসিক চাপের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ শরীর যে রাসায়নিক পদার্থ এবং হরমোন নিঃসরণ করে সেগুলির উপর মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণ।

লক্ষণ

এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসকেরা নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি চিহ্নিত করে থাকেন:

চিকিৎসা

চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত ঔষধগুলি গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন:    

amitriptyline bromazepam
carbamazepine clonidine
diazepam fluoxetine hydrochloride
imipramine hydrochloride lorazepam
paroxetine hydrochloride prazosin
propranolol hydrochloride risperidone
sertraline hydrochloride

চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত টেস্টগুলি করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন:    

সি-বি-সি (কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট) (CBC, Complete Blood Count)
কগনিটিভ বিহেবিয়ার থেরাপী (Cognitive Behavior Therapy, CBT)
কর্টিসোল (Cortisol)
সিটি স্ক্যান অফ হেড (CT scan of head)

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

নিম্নলিখিত বিষয়গুলি পোস্ট ট্রম্যাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে:

  • তীব্র বা দীর্ঘ দিন স্থায়ী মানসিক আঘাত (ট্রমা)।
  • পূর্বে এ ধরনের মানসিক আঘাতের অভিজ্ঞতা।
  • এমন কোনো পেশায় নিয়োজিত থাকা যেটির কারণে ট্রমা-সৃষ্টিকারী ঘটনার সম্মুখীন বেশি হতে হয়, যেমন- সামরিক পেশা।
  • উদ্বিগ্নতা এবং বিষণ্নতার মত অন্য মানসিক সমস্যা থাকা।
  • পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে সাহায্য না পাওয়া।
  • পরিবার/বংশে পোস্ট ট্রম্যাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার, বিষণ্নতা এবং অন্যান্য মানসিক রোগ আক্রান্ত ব্যক্তি থাকা।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গ: নারীদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা থাকে। পুরুষদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

জাত: হিস্প্যানিক ও কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম। শ্বেতাঙ্গ ও অন্যান্য জাতির মানুষের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা থাকে।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তর: ব্যক্তিভেদে মানসিক দৃঢ়তার পার্থক্য হয়। তবে প্রত্যেক ব্যক্তিরই মানসিক দৃঢ়তার একটি সীমা থাকে। বারবার এবং দীর্ঘ সময় ধরে ট্রমায় আক্রান্ত হলে এবং অন্যদের কাছ থেকে মানসিক সাহায্য না পেলে পোস্ট ট্রম্যাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

উত্তর: ট্রমাসৃষ্টিকারী ঘটনার পরপরই সাধারণত ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মাঝে কিছু কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। লক্ষণগুলি যদি এক মাসের বেশি স্থায়ী হয় তবে ট্রম্যাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারের পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। অনেক ব্যক্তি ট্রমার কারণে সৃষ্ট লক্ষণগুলি অনেক সময় শনাক্ত করতে পারেন না। অনেকে চিকিৎসা নেওয়ার আগে দীর্ঘ সময় ধরে নীরবে পোস্ট ট্রম্যাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারে ভুগতে পরেন।

উ: ট্রমার কারণে শিশু ও কিশোররা তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে, তবে তাদের প্রতিক্রিয়াগুলি প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিক্রিয়ার মতো নাও হতে পারে। অল্প বয়সের শিশুদের ক্ষেত্রে নিম্নে লিখিত লক্ষণগুলি দেখা দিতে পারে:

  • বিছানায় প্রস্রাব করা (প্রস্রাব করা শেখার পরও)।
  • কথা বলা ভুলে যাওয়া বা কথা না বলা।
  • বাবা-মা বা অন্য কোনো বয়স্ক ব্যক্তির সঙ্গ না ছাড়া।

বেশি বয়সের শিশুরা এবং কিশোরদের লক্ষণ অনেকটা বয়স্কদের লক্ষণের মতো হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে তারা অসংলগ্ন, অসম্মানজনক এবং ধ্বংসাত্মক আচরণও করতে পারে। অনেকের মাঝে প্রতিশোধপরায়ণতাও দেখা দিতে পারে।

হেলথ টিপস্‌

আপনি পোস্ট ট্রম্যাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত হলে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি অনুসরণ করতে পারেন:

অন্যদের সাহায্য নেওয়া: পোস্ট ট্রম্যাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারের কারণে অন্য ব্যক্তিদের থেকে আপনি মানসিকভাবে বিচ্ছিন্ন বোধ করতে পারেন। এই রোগের কারণে আপনার সামাজিক ক্রিয়াকলাপ এবং আপনজন থেকে দূরত্ব বজায় রাখার ইচ্ছা হতে পারে। তবে এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা এবং আপনজনদের নিকটে থাকা প্রয়োজন। তাই প্রয়োজনে আপনার পরিবারের সদস্য এবং কাছের বন্ধুদের সাহায্য করতে বলুন।

  • নেশাজাতীয় দ্রব্য পরিহার করা: আপনি আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়লে এবং ট্রমার স্মৃতি আপনাকে হতবিহ্বল করে তুলতে লাগলে আপনি মাদকাসক্ত হয়ে পড়তে পারেন। নেশাজাতীয় দ্রব্য সাময়িকভাবে আপনাকে স্বস্তি দিলেও পরবর্তীতে তা পোস্ট ট্রম্যাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারকে আরও খারাপ অবস্থায় নিয়ে যায়। পোস্ট ট্রম্যাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারের চিকিৎসাও এ কারণে বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
  • নিজের অসহায়ত্বকে মোকাবোলা করুন: পোস্ট ট্রম্যাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারে নিয়ন্ত্রণ করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল নিজের অসহায়ত্বকে মোকাবেলা করা। ট্রমার কারণে নিজেকে আপনার দুর্বল মনে হবে। আপনার মনে রাখা প্রয়োজন যে, এই কঠিন পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় মানসিক শক্তি ও দক্ষতা আপনার আছে।

নিজের মানসিক শক্তি পুনোরোদ্ধার করার একটি উপায় হল অন্যদের সাহায্য করা। আপনি এজন্য রক্তদান করতে পারেন, পরিচিতদের উপকার করতে পারেন বা  কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক সাহায্য করতে পারেন। এই ধরনের ইতিবাচক কাজ আপনার অসহায়ত্বের অনুভূতিকে কমিযে দেবে।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তার

ডাঃ মোঃ ফজলুল বারী মিঠু

সাইকিয়াট্রি ( মানসিক) ( Psychiatry)

এমবিবিএস , এমসিপিএস,, এমডি (কোর্স)

অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আহসানুল হাবীব

সাইকিয়াট্রি ( মানসিক) ( Psychiatry)

এমবিবিএস, , এফসিপিএস(সাইক্রিয়াট্রি)

ডাঃ অনুপম দাশ

সাইকিয়াট্রি ( মানসিক) ( Psychiatry)

এমবিবিএস, এমফিল, এমডি

ডাঃ মোঃ ফখরুজ্জামান শহীদ

সাইকিয়াট্রি ( মানসিক) ( Psychiatry)

এমবিবিএস, এমডি(সাইকিয়াট্রি), ডিএইচপিই (অস্ট্রলিয়া), ডিসিএম(ঢাকা)

ক্যাপ্টেন ডাঃ এ এস এম আনিসুজ্জামান

সাইকিয়াট্রি ( মানসিক) ( Psychiatry)

এমবিবিএস (ঢাকা), ডি-সাইক, এফ-সাইক (ভিয়েনা)

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অধ্যাপক ডাঃ আসফাকুজ্জামান চৌধুরী

সাইকিয়াট্রি ( মানসিক) ( Psychiatry)

এমবিবিএস, এমসিপিএস, এফসিপিএস

অধ্যাপক ডাঃ সাহিদা চৌধুরী

সাইকিয়াট্রি ( মানসিক) ( Psychiatry)

এমবিবিএস, ডিপিএম

ডাঃ এ এইচ এম মঞ্জুরুল হক

সাইকিয়াট্রি ( মানসিক) ( Psychiatry)