পায়ের পাতায় ব্যথা (Foot or toe pain)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

পায়ের পাতা হাড়, লিগামেন্ট (ligament), টেন্ডন(tendon) ও মাংসপেশির এক জটিল সন্নিবেশ স্থল। যেহেতু পায়ের পাতা শরীরের সমগ্র ভার বহন করে, তাই এই অংশে আঘাত লাগা ও ব্যথা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

পায়ের পাতার ব্যথা পায়ের আঙুল থেকে শুরু করে গোড়ালির পিছনের অ্যাকিলিস টেন্ডনের মধ্যকার যে কোনো অংশে অনুভূত হতে পারে।

ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমে কিছু ক্ষেত্রে পায়ের পাতার ব্যথা কমানো যেতে পারে। তবে সম্পূর্ণরূপে এই ব্যথা সারতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। পায়ে কোনো আঘাত লাগার পর পায়ের পাতায় ব্যথা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।

কারণ

বিভিন্ন কারণে এই লক্ষণ দেখা দিতে পারে:  যেমন-

গাউট/গেঁটেবাত (Gout) প্যারোনাইকিয়া (Paronychia)
সিউডোহাইপোপ্যারাথাইরয়ডিজম (Pseudohypoparathyroidism) পেরিফেরাল নার্ভ ডিজঅর্ডার (Peripheral nerve disorder)
ব্রুইস (Bruise) ফ্র্যাকচার অফ অ্যাঙ্কেল (Fracture of ankle)
থ্রম্বোফ্লেবাইটিস (Thrombophlebitis) গ্যাংলিওন সিস্ট (Ganglion cyst)
ক্যালাস (Callus) ক্রাশিং ইনজুরি (Crushing injury)
ডিজলোকেশন অফ দি ফুট (Dislocation of the foot) এন্ডোফথ্যালমাইটিস (Endophthalmitis)
কাপোসি সারকোমা (Kaposi sarcoma) ফ্ল্যাট ফিট (Flat feet)
লিম্ফ্যাঞ্জাইটিস (Lymphangitis) নিউরালজিয়া (Neuralgia)
স্পাইনোসেরিবেলার অ্যাটাক্সিয়া (Spinocerebellar ataxia) অস্টিওকন্ড্রোমা (Osteochondroma)
অস্টিওকন্ড্রোসিস (Osteochondrosis) স্প্রেইন অর স্ট্রেইন (Sprain or strain)
পেম্ফিগাস (Pemphigus) পেরিফেরাল আর্টেরিয়াল ডিজিজ (Peripheral arterial disease)
সেরিঙ্গোমায়েলিয়া (Syringomyelia) পেরিফেরাল আর্টেরিয়াল এমবলিজম (Peripheral arterial embolism)
টেন্ডিনাইটিস (Tendinitis) অ্যাথলেট'স ফুট (Athlete's foot)
বানিওন (Bunion) পায়োজেনিক স্কিন ইনফেকশন (Pyogenic skin infection)
ফ্র্যাকচার অফ দি ফিঙ্গার (Fracture of the finger) ফ্র্যাকচার অফ দি ফুট (Fracture of the foot)

সংশ্লিষ্ট লক্ষণসমূহ

এই লক্ষণের সাথে অন্যান্য যে সকল লক্ষণ দেখা যেতে পারে সেগুলো হলোঃ

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

নিম্নলিখিত বিষয়গুলি পায়ের পাতায় ব্যথা হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে-

  • বয়স বৃদ্ধি।
  • দীর্ঘ সময় ধরে পায়ের পাতার উপর ভর করে থাকা।
  • শরীরের অতিরিক্ত ওজন।
  • পায়ের পাতায় জন্মগত বা জন্মের পরে সৃষ্ট হওয়া বিকৃতি।
  • আঘাত লাগা।
  • কম কুশনযুক্ত এবং পায়ে ঠিকমতো খাটে না এমন জুতা ব্যবহার করা।
  • অতিরিক্ত হাঁটা বা খেলাধূলা করা।

 

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গ: পুরুষ ও নারী উভয়ের মধ্যে এই লক্ষণ দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা থাকে।

জাত: শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা থাকে। হিস্প্যানিক ও অন্যান্য জাতির মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উ: হ্যাঁ। উঁচু পায়ের তালুর জন্য হাঁটার সময় পায়ের পাতা স্বাভাবিকভাবে সোজা না হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অর্থাৎ, এ জন্য পায়ের পাতা বেশি অনমনীয় হয়ে যায়। অনমনীয় পায়ের পাতা আশেপাশের অস্থিসন্ধি ও নরম টিস্যুর উপর অতিরিক্ত চাপ ফেলে। যেসব ব্যক্তির পায়ের তালু উঁচু, তাদের পায়ের আঙুলের অস্থিসন্ধি সঠিক ভাবে নড়তে পারে না। এ কারণে বুড়ো আঙুলের প্রধান অস্থিসন্ধির নীচে অবস্থিত দুটি ছোট হাড়ের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। এই হাড়গুলিকে সিসাময়েড (sesamoid) বলে। পায়ের উঁচু তালুর জন্য বুড়ো  আঙুলের অস্থিসন্ধিতে আর্থ্রাইটিস হতে পারে। আবার এই আর্থ্রাইটিসের কারণে সিসাময়েডের সাথে যেখানে বুড়ো আঙুল যু্ক্ত হয় সেখানেও আর্থ্রাইটিস হতে পারে।

উ: চিকিৎসকরা মনে করেন, পায়ের আঙুলের মধ্যে অবস্থিত  ছোট একটি স্নায়ুকে[ইন্টারডিজিটাল নার্ভ (interdigital nerve)] চাপ প্রদানকারী ক্ষতযুক্ত টিস্যু থেকে ব্যথাযুক্ত নিউরোমা হয়ে থাকে। চাপ কমাতে সেইসব জুতা ব্যবহার করা উচিৎ যেগুলিতে পায়ের আঙুলের জন্য যথেষ্ট জায়গা রয়েছে।  ছোট ও অপ্রশস্ত জুতা ব্যবহার করা উচিৎ নয়। পায়ের আঙুলের মাঝে  ছোট মেটাটারসাল প্যাড ব্যবহার করেও ব্যথা উপশম করা যেতে পারে। এই প্যাড পায়ের আঙ্গুলগুলিকে কিছুটা ফাঁকা করে ইন্টারডিজিটাল নার্ভের উপর চাপ কমিয়ে দেয়।

ফিজিক্যাল থেরাপির মাধ্যমে কিছু ক্ষেত্রে উপকার পাওয়া যেতে পারে। এর মাধ্যমে ব্যথাযুক্ত স্থানের চারপাশের ইনফ্লামেশন কমানো হয়।

আলট্রা সাউন্ড অথবা টপিক্যাল কর্টিসন অ্যাপলিকেশনের ( topical cortisone applications) মাধ্যমে এই সমস্যার চিকিৎসা করা হয়। পায়ের পাতাকে সহায়তা দেওয়া ও ক্ষতিগ্রস্ত স্নায়ুর উপর থেকে চাপ কমাতে চিকিৎসক অর্থোটিক্স (Orthotics) চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শও দিতে পারেন।

উপরোক্ত চিকিৎসা পদ্ধতিতে যদি কাজ না হয়, তাহলে কর্টিসন ইনজেকশন নেওয়া লাগতে পারে। ব্যথা যদি অসহ্য হয়ে যায়, তাহলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে শারীরিক পরিশ্রম থেকে বিরত থাকতে হবে। কিছু ক্ষেত্রে সার্জারিও দরকার হতে পারে।

হেলথ টিপস্‌

নিম্নলিখিত বিষয়গুলি অনুসরণ করে পায়ের পাতার ব্যথা কমানো যেতে পারে-

  • ব্যথা ও ফোলা কমাতে বরফ প্রয়োগ করুন।
  • ব্যথাযুক্ত পা যতোটা সম্ভব উঁচু করে রাখুন।
  • ব্যথা না কমা পর্যন্ত কম কাজ করুন।
  • পায়ে সঠিকভাবে খাটে এবং আপনি যে কাজ করছেন সেটির জন্য উপযুক্ত জুতা ব্যবহার করুন।
  • চুলকানি ও প্রদাহ কমাতে পায়ের পাতার প্যাড ব্যবহার করতে পারেন।