যক্ষা (Tuberculosis)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

রোগটি টি-বি (TB) এবং টিউবারকুলোসিস ইসফেকশন (Tuberculosis Infection) নামেও পরিচিত।

যক্ষা একটি সংক্রামক রোগ, যা মূলত ফুসফুসকে আক্রান্ত করে থাকে। রোগটি অনেক ক্ষেত্রে মারাত্মক আকার ধারণ করে। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি ও কাশির মাধ্যমে যক্ষা সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ছড়ায়।

উন্নত দেশগুলিতে সাধারণত যক্ষার প্রাদুর্ভাব দেখা যায় না। তবে এইচ-আই-ভি (HIV- human immunodeficiency virus) ভাইরাসের সংক্রমনের কারণে যক্ষায় আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে গেছে। কারণ এইচ-আই-ভি আক্রান্ত ব্যক্তির দুর্বল ইমিউন সিস্টেম (রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা) যক্ষার জীবাণুকে প্রতিহত করতে পারে না।

অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ যক্ষারোধকারী ঔষধ যক্ষা নিরাময় করতে পারে না্। যক্ষার কারণে সৃষ্ট ইনফেকশন নির্মূল করতে এবং অ্যান্টিবায়োটিক যাতে সঠিক ভাবে কাজ করে সে জন্য আক্রান্ত ব্যক্তির কয়েক মাস ধরে চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের ঔষধ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

কারণ

মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস নামক ব্যাকটেরিয়ার কারণে যক্ষা হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি থুতুর মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তি কথা বললে, হাসলে বা গান গাইলেও ব্যাকটেরিয়া ছড়াতে পারে।

যক্ষা একটি সংক্রামক রোগ, কিন্তু এই রোগ সহজে কারো শরীরে সংক্রমিত হয় না। আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে বসবাস করলে বা কাজ করলে যক্ষায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে নিয়মিত ও সঠিকভাবে ঔষধ গ্রহণ করার পর বেশিরভাগ আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে যক্ষার সংক্রমণ হওয়া বন্ধ হয়ে যায়।

এইচ-আই-ভি ও যক্ষা

এইচ-আই-ভি সংক্রমণের ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে যায়, ফলে তার শরীর যক্ষার ব্যাকটেরিয়াকে প্রতিহত করতে পারে না। তাই এইচ-আই-ভি আক্রান্ত ব্যক্তিদের যক্ষা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

ঔষধরোধী যক্ষা

যক্ষার ব্যাকটেরিয়া অনেক সময় যক্ষারোধী ঔষধের ক্রিয়াশীলতাকে প্রতিহত করে। এজন্য যক্ষার কারণে অনেকের মৃত্যু হয়ে থাকে। ৬০ বছর পূর্বে যক্ষার অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার শুরু হওয়ার পর এমন কিছু যক্ষার জীবাণু সৃষ্টি হয়েছে যেগুলির যক্ষার ঔষধকে প্রতিহত করার ক্ষমতা আছে। এই ক্ষমতা বংশানুক্রমে জীবাণুগুলির মধ্যে থেকে যায়।

একটি অ্যান্টিবায়োটিক যক্ষার জীবাণুকে ধ্বংস করতে ব্যর্থ হলে ঔষধরোধী যক্ষা দেখা দেয়। কারণ এর ফলে বেঁচে যাওয়া ব্যাকটেরিয়াগুলি তখন ওই নির্দিষ্ট ঔষধের ক্রিয়া রোধ করতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে এই ব্যাকটেরিয়াগুলিকে অন্যান্য কিছু অ্যান্টিবায়োটিকও দমন করতে পারে না। কিছু কিছু যক্ষার ব্যাকটেরিয়া আইসোনাজিড ( isoniazid) ও রিফামপিনের (rifampin) মতো অধিক ব্যবহৃত ঔষধকেও প্রতিরোধ করতে পারে।

ফ্লুরোকুইনলোন নামক অ্যান্টিবায়োটিক এবং অ্যামিকাসিন, ক্যানামাইসিন ও ক্যাপরিওমাইসনের মতো কম ব্যবহৃত ইনজেকশনের ক্রিয়াশীলতাকেও কিছু কিছু যক্ষার ব্যাকটেরিয়া প্রতিহত করে থাকে। সাধারণভাবে ব্যবহৃত ঔষধ যে সব ইনফেকশন প্রশমিত করতে পারে না, সেগুলির জন্য এই ধরনের ঔষধ ব্যবহার করা হয়।

লক্ষণ

এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসকেরা নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি চিহ্নিত করে থাকেন:

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

যে কোনো ব্যক্তিই যক্ষায় আক্রান্ত হতে পারে। তবে কিছু কিছু বিষয় এই রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এরকম কিছু বিষয় হলো:

দুর্বল ইমিউন সিস্টেম (রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা):

শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা দৃঢ় হলে, তা যক্ষার ব্যাকটেরিয়াকে প্রতিহত করতে পারে। কিন্তু দুর্বল প্রতিরোধ ব্যবস্থার পক্ষে এই ব্যাকটেরিয়া থেকে শরীরকে সুরক্ষা দান করা সম্ভব নয়। কিছু কিছু রোগ ও ঔষধ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দিতে পারে। যেমন:

  • এইচ-আই-ভি/ এইডস।
  • ডায়াবেটিস।
  • কিডনির রোগের শেষ পর্যায়।
  • কিছু বিশেষ ধরনের ক্যান্সার।
  • ক্যান্সারের চিকিৎসা, যেমন কেমোথেরাপি।
  • রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস ও ক্রোন্স ডিজিজ নিরাময়ের কিছু ঔষধ গ্রহণ।
  • পুষ্টিহীনতা।
  • খুব কম বা বেশি বয়স।

নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে ভ্রমণ বা বসবাস:

যেসব অঞ্চলে যক্ষার প্রাদুর্ভাব বেশি সেসব স্থানে বসবাস করলে বা ভ্রমণ করলে যক্ষায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যেমন-

  • আফ্রিকার উপ-সাহারা অঞ্চল।
  • ভারত।
  • পাকিস্তান।
  • চীন।
  • রাশিয়া।

চিকিৎসার অভাব:  

সুচিকিৎসার অভাব হলে যক্ষা হওয়ার  ঝুঁকি বাড়ে।

ঔষধের অপব্যবহার অপব্যবহার:

আই-ভি (I-intra V-venus) ড্রাগ বা অ্যালকোহলের অপব্যবহারের কারণে ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে যায়, এবং এই কারণে যক্ষা হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে।

তামাক ব্যবহার:

উচ্চ পরিমাণে তামাক গ্রহণ যক্ষা ও যক্ষার কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

কর্মস্থল ও বাসস্থানঃ

  • হাসপাতালে কাজ করা: নিয়মিত যক্ষায় আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে গেলে যক্ষা হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। মাস্ক ব্যবহার ও বারবার হাত পরিষ্কার করার মাধ্যমে এই ঝুঁকি এড়ানো যেতে পারে।
  • জনবহুল স্থান: কোনো স্থান জনবহুল হলে এবং সেখানে বায়ুচলাচলের সুব্যবস্থা না থাকলে সেখানে যক্ষা আক্রান্ত ব্যক্তি হতে এই রোগের জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই কারাগার, অভিবাসন কেন্দ্র ও নার্সিং হোমে যারা কাজ করেন, তাদের যক্ষায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • শরণার্থী শিবির: সাধারণত শরণার্থী শিবির জনবহুল হয়ে থাকে। তাছাড়া এমন স্থানে পুষ্টিহীনতা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাবসহ নানা ধরনের স্বাস্থ্যসমস্যা দেখা দেয়। তাই শরণার্থী শিবিরে যক্ষায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গ: পুরুষদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা থাকে। নারীদের মধ্যে  এই রোগ নির্ণয় হওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

জাতি: শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার সম্ভাবনা ৪ গুণ কম। হিস্প্যারিনকদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা থাকে। কৃষ্ণাঙ্গ ও অন্যান্য জাতির মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার সম্ভাবনা ২ গুণ বেশি।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তরঃ মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস দ্বারা সৃষ্ট ইনফেকশনের কারণে যক্ষা হয়। এটি মূলত ফুসফুসকে আক্রান্ত করে। তবে শরীরের যে কোনো অংশকেই যক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

শুধু ফুসফুস ও গলার ইনফেকশনই সংক্রামক হয়ে থাকে। যক্ষা হলে দুর্বলতা, ওজন হ্রাস, জ্বর ও রাতে শরীরে ঘাম হওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দেয়। ফুসফুসের ইনফেকশনের অবস্থার অবনতি ঘটলে বুকে ব্যথা, রক্তযুক্ত কাশি ও শ্বাসকষ্ট হয়।

উত্তরঃ প্রাথমিক অবস্থায় কাজ করা উচিত নয়। আপনি পালমোনারি টিউবারকু্লোসিসে আক্রান্ত হলে চিকিৎসক আপনাকে বাড়িতে থাকার পরামর্শ দেবেন। বাড়িতে থাকা অবস্থায় আশেপাশে অন্য কেউ থাকলে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।

হেলথ টিপস্‌

আপনার শরীরে যদি সুপ্তাবস্থায় যক্ষার ইনফেকশন ধরা পড়ে, তাহলে চিকিৎসক যক্ষার বিস্তার লাভ রোধ করার জন্য আপনাকে কিছু ঔষধ গ্রহণ করতে বলবেন। যক্ষা  কিডনিকে আক্রান্ত করলে সংক্রামক হয়ে থাকে। তাই সুপ্তাবস্থায় যক্ষাকে প্রতিরোধ করা গেলে, অন্য ব্যক্তির শরীরে এর সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব।

আপনি যক্ষায় আক্রান্ত হলে, পরিবারের সদস্য ও বন্ধুবান্ধবদের থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকুন। ঔষধ গ্রহণের পর সেরে উঠতে আপনার কয়েক সপ্তাহ লাগতে পারে। পরিবারের সদস্য ও পরিচিতদের যক্ষার জীবাণুর সংক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলি অনুসরণ করুন:

  • বাড়িতে থাকা: যক্ষার চিকিৎসা শুরু হওয়ার পর প্রথম কয়েক সপ্তাহ বাড়ির বাইরে যাবেন না। রাতে পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে একই ঘরে ঘুমানো থকে বিরত থাকুন।
  • ঘরে বাতাস প্রবেশ করানো: আবদ্ধ স্থানে যক্ষার জীবাণু সহজে বিস্তার লাভ করে। তাই ঘরের জানালা খোলা রাখুন, এবং ফ্যান ছেড়ে ঘরে বাতাস চলাচলের সুযোগ করে দিন।
  • মুখ ঢেকে রাখা: হাঁচি, কাশি ও হাসার সময় মুখ টিস্যু পেপার দিয়ে ঢেকে রাখুন। ব্যবহৃত টিস্যুগুলি একটি ব্যাগে রাখুন, এবং পরবর্তীতে ফেলে দিন।
  • মাস্ক ব্যবহার করুন: চিকিৎসা শুরু হওয়ার পর তিন সপ্তাহ পর্যন্ত মুখে মাস্ক ব্যবহার করুন। মাস্ক অন্যদের শরীরে যক্ষার জীবাণু সংক্রমণকে রোধ করে।
  • ঔষধের কোর্স পূর্ণ করুন: এটি যক্ষা নিরাময়ের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ ধাপ। আপনি নির্দিষ্ট সময়ের আগে চিকিৎসা বন্ধ করলে বা ঔষধের ডোজ বাদ দিলে ব্যাকটেরিয়ার মিউটেশন হতে পারে, এবং এ জন্য আপনার ক্ষেত্রে যক্ষার ঔষধ নিস্ক্রিয় হয়ে যেতে পারে। যক্ষার ব্যাকটেরিয়া ঔষধরোধী হয়ে গেলে যক্ষা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে, এবং তখন এর চিকিৎসা করা কঠিন হয়ে যায়।
  • টিকা: যেসব দেশে যক্ষা বেশি দেখা যায়, সেসব দেশে যক্ষা থেকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য নবজাতকদের বি-জি-সি টিকা দেওয়া হয়। এছাড়া আরও বিভিন্ন ধরনের টিকা নিয়ে গবেষণা চলছে।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তার

ডাঃ মোঃ আবুল খায়ের

মেডিসিন ( Medicine), কার্ডিওলজি ( হার্ট) ( Cardiology)

এমবিবিএস(ডিএমসি), ডি-কার্ড(এনআইসিভিডি), এফসিপিএস(কার্ডিওলজি)

ডাঃ মুহাম্মদ মাহফুজুল হক(রায়হান)

মেডিসিন ( Medicine)

এমবিবিএস(ডিএমসি), বিসিএস(স্বাস্থ্য), এফসিপিএস(মেডিসিন)

ডাঃ মোহাম্মদ নূরুল্লাহ

মেডিসিন ( Medicine)

এমবিবিএস, এফসিপিএস(মেডিসিন পি ২), পিজিটি(মেডিসিন)

ডাঃ মোহাম্মদ আব্দুর রহিম

মেডিসিন ( Medicine)

এমবিবিএস, , এফসিপিএস (মেডিসিন)

ডাঃ মোঃ রসুল আমিন(শিপন)

মেডিসিন ( Medicine), কার্ডিওলজি ( হার্ট) ( Cardiology)

এমবিবিএস(ঢাকা), এমডি(কার্ডিওলজি), এফসিপিএস(মেডিসিন)

ডাঃ গোবিন্দ চন্দ্র রায়

কার্ডিওলজি ( হার্ট) ( Cardiology), মেডিসিন ( Medicine)

এমবিবিএস, এফসিপিএস(মেডিসিন), এমডি(কার্ডিওলজী)

ডাঃ মোঃ মাসুদ পারভেজ

মেডিসিন ( Medicine), কার্ডিওলজি ( হার্ট) ( Cardiology)

এমবিবিএস (এস এস এম সি ঢাকা) , ডি কার্ড (বি এস এম এম ইউ) ,, বিসিএস (স্বাস্থ্য) ,, এফসিসিএস (সার্টিফায়েড ইউএসএ)

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আব্দুল আলীম (অবঃ)

মেডিসিন ( Medicine)

এমবিবিএস(ঢাকা), এফসিপিএস(মেডিসিন), এফএসিপি(ইউএসএ), এফআরসিপি(গ্লাসগো), সিনিয়র ফেলোসিপ(সিঙ্গাপুর)