দাঁতের ক্ষয় রোগ (Dental caries)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

দাঁতের ক্ষয় রোগ বয়স্ক এবং শিশু উভয়ের ক্ষেত্রে একটি সাধারণ সমস্যা। শিল্পোন্নত দেশগুলোতে প্রায় ৬০-৯০% শিশুর দাঁতে বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়। দাঁতের ক্ষয়জনিত সমস্যা আকস্মিকভাবে হয় না। প্রথমদিকে দাঁতের উপরিভাগে এনামেল নষ্ট হতে থাকে। এটি সাধারণত খালি চোখে দেখা যায় না, কেননা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দুইটি দাঁতের মধ্যবর্তী অংশে এই ক্ষতি হয়ে থাকে, যা ধীরে ধীরে ছড়াতে থাকে ও দাঁতের অন্যান্য অংশ, অর্থাৎ তুলামূলকভাবে আরো দুর্বল ও সংবেদনশীল অংশের ক্ষতি করে। এনামেল পুরোপুরিভাবে নষ্ট হয়ে গেলে দাঁত ক্ষয় হতে শুরু করে এবং মাড়ি ও দাঁতের গোড়া বা মূল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দাঁতের যত্ন না নিলে ও নিয়মিত ব্রাশ না করলে এ সমস্যা দেখা দেয়। এর ফলে দাঁতে ব্যথা, ইনফেকশন, এমনকি দাঁত পড়ে যাওয়ার মতো সমস্যাও হতে পারে।


কারণ

আমাদের দাঁত ও মাড়িতে একধরনের স্বচ্ছ ও আঠালো পদার্থ জমতে দেখা যায়, যাকে আমরা প্লাক (Plaque) বলে থাকি। এই প্লাকে অসংখ্য ব্যাকটেরিয়া থাকে, যা আমদের গ্রহণ করা খাদ্যবস্তুতে উপস্থিত সুগার বা চিনির উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকে।  ব্যাকটেরিয়া থেকে একধরনের এসিড তৈরী হয় যা আমারা খাবার খাওয়ার ২০ মিনিট বা এর অধিক সময় ধরে দাঁতের ক্ষতি করতে থাকে। এই এসিডের প্রভাবে এনামেল নষ্ট হয় ও দাঁত ক্ষয়ে যায়।

অন্যান্য যেসকল কারণে দাঁতের ক্ষয় রোগ দেখা দেয় সেগুলো হলোঃ

  • নিয়মিত ফ্লসিং ও ব্রাশ না করলে। এছাড়াও নির্দিষ্ট সময় পর পর ডেন্টিস্ট দ্বারা দাঁত পরিষ্কার ও চেক-আপ না করালে।
  • চিনিযুক্ত ও কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার বেশি খেলে।
  • ফ্লুরাইডের অভাব দেখা দিলে এই সমস্যা হয়ে থাকে কারন ফ্লুরাইড এসিড ও প্লাকের হাত থেকে দাঁতকে সুরক্ষিত রাখে এবং ক্ষয় প্রতিরোধ করে।
  • মুখের লালা শুকিয়ে গেলেঃ লালা দাঁতে আটকা থাকা খাদ্যকণা ও ক্ষতিকর সুগার প্রতিরোধ করে এবং দাঁতকে ক্ষয়ের হাত থেকে বাঁচায়। সাধারণ মুখ দিয়ে শ্বাস নিলে ও নির্দিষ্ট কিছু ঔষধের ব্যবহারে মুখের লালা শুকিয়ে যায়। বয়স্কদের এ সমস্যা বেশি হয়ে থাকে।
  • ডায়াবেটিস থাকলে।
  • সিগারেট, সিগারেটের ধোঁয়া ও তামাক ব্যবহারের কারণে।

বয়স্কদের তুলনায় শিশুদের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে যাদের দাঁত এখনো পুরোপুরিভাবে উঠেনি, তাদের এ সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। কেননা এ অবস্থায় দাঁতে মিনারেলের পরিমাণ কম থাকে। ফলে খুব দ্রুত দাঁত নষ্ট হতে শুরু করে।

লক্ষণ

চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তিদের মধ্যে সাধারণত নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখতে পানঃ

চিকিৎসা

চিকিৎসকেরা এই রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নের ঔষধগুলো দিয়ে থাকেনঃ

amoxycillin benzocaine
cephradine chlorhexidine hydrochloride, topical
etoricoxib ketorolac
metronidazole

চিকিৎসকেরা এই রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নের টেস্টগুলো দিয়ে থাকেনঃ

ডেন্টাল প্রসিডিউরস (Dental procedures)

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

এ রোগের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলো নিম্নে আলোচনা হলোঃ

  • সাধারণত পেছনের দিকের দাঁতে এ সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। অবস্থানের কারণের এ অংশের দাঁতগুলো খুব সহজে পরিষ্কার করা যায় না। একই সাথে গঠনগত বৈশিষ্ট্যের কারণে এ অংশের দাঁতে খুব সহজে খাদ্যকণা আটকে যায়। ফলে প্লাক ও এসিডের আক্রমণ বেশি হয়।
  • কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার দাঁতের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে। যেসকল খাদ্যে কার্বোহাইড্রেট বেশি থাকে সেগুলো হলোঃ মিষ্টি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার, সোডা ও কোমল পানীয়, চকোলেট, চিপস, বিস্কুট ইত্যাদি। মিষ্টি জাতীয় খাবার একটু পরপর খেলে দাঁতে এসিডের আক্রমণ বেড়ে যায় ও দাঁতের ক্ষতি হয়।
  • নিয়মিত দাঁতের যত্ন না নিলে দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।
  • বেশিরভাগ মা-বাবাই শিশুকে ঘুমন্ত অবস্থায় ফিডার দিয়ে থাকেন, যেখানে চিনিযুক্ত খাবার বেশি থাকে। ফলে শিশু যতক্ষণ ঘুমিয়ে থাকে ততক্ষণ এই খদ্যকণা শিশু দাঁতে আটকে থাকে ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ বাড়তে থাকে। যার ফলে দাঁতের ক্ষতি হয়। যাকে বলা হয় বেবি বোটল টুথ ডিকে (baby bottle tooth decay)।
  • ধুমপান ও অ্যালকোহল এ রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। ধূমপানের কারণে মুখের লালা শুকিয়ে যায় ও অ্যালকোহল ব্যবহারের কারনে এনামেল নষ্ট হয়ে যায়।
  • হার্টবার্ন বা গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজের (gastroesophageal reflux disease) কারণে পাকস্থলির এসিড উপরের দিকে উঠে আসে, যার ফলে দাঁতের ক্ষতি হয় ও এনামেল নষ্ট হয়ে যায়।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গঃপুরুষদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে।মহিলাদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা একগুণ কম।

জাতিঃ শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গদের ক্ষেত্রে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। হিস্পানিক ও অন্যান্য জাতির ক্ষেত্রে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা একগুণ কম।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তরঃ অধিকাংশ ব্যক্তিই শুধুমাত্র দাঁতে কোন সমস্যা হলেই ডেন্টিস্টের কাছে যায়। এই ধরনের চিকিৎসাকে বলা হয় ‘ক্রাইসিস ট্রিটমেন্ট’, যা ‘প্রিভেন্টিভ ট্রিটমেন্ট’ এর সম্পূর্ণ বিপরীত। দাঁতের যেকোনো সমস্যা কোনো লক্ষণ ছাড়াই দেখা দেয় এবং গুরুতর পর্যায়ে গিয়ে এর লক্ষণ প্রকাশ পায় এবং দাঁত ক্ষয়ে যায়। এক্ষেত্রে কোনো ব্যথা অনুভূত হয় না, তবে এর ফলে নার্ভের ক্ষতি হয়। এই পর্যায়ে রুট ক্যানালের সাহায্যে চিকিৎসা করা হয়, যা মূলত একটি জটিল প্রক্রিয়া। নিয়মিত ডেন্টিস্টের কাছে গেলে, দাঁতের যেকোনো সমস্যা প্রাথমিক পর্যায়েই বোঝা যায় ও যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।

 উত্তরঃ সাধারণত দেখা যায়, পরিবারের কোনো এক সদস্যের, বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে একজনের দাঁতের সমস্যা দেখা দিলে অন্য শিশুর ক্ষেত্রেও এ রোগ দেখা দিতে পারে।

হেলথ টিপস্‌

দাঁতের ক্ষয় জনিত সমস্যা প্রতিরোধে চিনি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার সীমিত পরিমাণে খেতে হবে। এছাড়াও মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়ার পর মুখের অভ্যন্তরে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। আবার মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়ার পর পনির খেলে তা ওরাল ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করে। ক্যাফেইন ও ধূমপানের কারণে মুখের লালা শুকিয়ে যায়। চিনিবিহীন চুয়িং গাম মুখে লালার পরিমাণ সঠিক রাখতে সাহায্য করে। শিশুদের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, শিশুর খাবারে আলাদা ভাবে চিনি বা মিষ্টি বাড়ানোর জন্য কোনো উপাদান ব্যবহার করা যাবে না।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তার

ডাঃ মোহাম্মদ নাজমুল কবির

ডেন্টিস্ট্রি ( Dentistry)

বিডিএস, বিসিএস(স্বাস্থ্য), পিজিটি, ডিডিএস

ডাঃ শরীফুল ইসলাম

ডেন্টিস্ট্রি ( Dentistry)

বিডিএস, ডিডিএস(ডিইউ) , পিজিটি(শ্রীলংকা)

ডাঃ মোঃ ফজলে রাব্বী

ডেন্টিস্ট্রি ( Dentistry)

বিডিএস(সিটি ডেন্টাল কলেজ এন্ড হাসপাতাল), পিজিটি(ওরাল এন্ড ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জারী)

ডাঃ মোঃ শাফায়েত আলী

ডেন্টিস্ট্রি ( Dentistry)

বিডিএস(ডিিইউ),, এমএস(থিসিস),

ডাঃ শাম্বী মুল্ক চৈতি

ডেন্টিস্ট্রি ( Dentistry)

বিডিএস, বিএমডিসি

ডাঃ মোহসিনা সুলতানা

ডেন্টিস্ট্রি ( Dentistry)

বিডিএস, পিজিটি, ডেন্টিস্ট্রি(শহীদ সোহরাওয়ার্দি হাসপাতাল), পিজিটি অর্থোডন্টিক(ঢাকা ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতাল)

ডাঃ শামসুন নাহার নিপা

ডেন্টিস্ট্রি ( Dentistry)

বি.ডি. এস(ঢাকা)

ডাঃ রেহনুমা জেবীন রাখী

ডেন্টিস্ট্রি ( Dentistry)

বিডিএস, এমপিএইচ, পিজিটি