মাড়ির রোগ (Gum disease)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

রোগটি পেরিওডন্টাল ডিজিজ (Periodontal Disease) এবং প্যারোডন্টোসিস (Parodontosis) নামেও পরিচিত।

মাড়ির রোগ হলে মাড়িতে জ্বালাপোড়া/প্রদাহ হয়, যা পরবর্তীতে আমাদের দাঁত সংলগ্ন হাড়কে প্রভাবিত করে। ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ক্রমাগতভাবে দাঁতের চারপাশে প্লাক (pluck) (দাঁতের উপর জমে উঠা নরম সাদা পদার্থ বিশেষ), আঠালো, বর্ণহীন পাতলা আবরণ তৈরি হয়। প্রতিদিন দাঁত ব্রাশ এবং ফ্লসিং(flossing) (সুতার সাহায্যে দাঁতের কোণা থেকে খাদ্যকণা দূর করা) না করলে এই প্লাক আরও বৃদ্ধি পায় এবং এই ব্যাক্টেরিয়া মাড়ি এবং দাঁতের ক্ষতি করার সাথে সাথে দাঁতের সাথে সংযুক্ত মাড়ির টিস্যু এবং হাড়কেও আক্রমণ করে। এর ফলে দাঁত পড়ে অথবা ভেঙ্গে যেতে পারে। এ অবস্থায় ডাক্তারের সাহায্যে কখনও কখনও দাঁত ফেলে দিতে হতে পারে।

এই রোগের তিনটি ধাপ রয়েছে-

জিঞ্জিভাইটিস (Gingivitis): এটা মাড়ির রোগের প্রাথমিক স্তর। মাড়ির ধারে/গোড়ায় প্লাক জমার কারণে মাড়িতে জ্বালাপোড়া হয়। নিয়মিত ব্রাশ এবং ফ্লসিং এর মাধ্যমে প্লাক পরিষ্কার না হলে এর থেকে টক্সিন সৃষ্টি হয়, যার ফলে মাড়ির টিস্যুতে জ্বালাপোড়া হয়। একে গিঞ্জিভাইটিস বলে। অনেক সময় ব্রাশ এবং ফ্লসিং করার সময় রক্ত পড়তে দেখা যায়। যেহেতু প্রাথমিক অবস্থায় দাঁত সংলগ্ন হাড় এবং টিস্যু প্রভাবিত হয় না, তাই এ অবস্থায় এর দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতি কমানো সম্ভব।

পেরিওডন্টাইটিস (Periodontitis): এই স্তরে আমাদের দাঁতকে সঠিক জায়গায় ধরে রাখতে সাহায্যকারী হাড় এবং তন্তুর (fiber) ক্ষতিপূরণ করা সম্ভব হয় না। এই অবস্থায় মাড়িতে গর্ত সৃষ্টি হয় যেখানে খাবার এবং প্লাক গিয়ে জমা হয়। পরবর্তী ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেতে দাঁতের সঠিক চিকিৎসা এবং যত্ন নেয়া প্রয়োজন।

অ্যাডভ্যান্সড পেরিওডন্টাইটিস (Advanced Periodontitis): এটা মাড়ির রোগের সর্বশেষ স্তর, এই স্তরে দাঁতকে সঠিক জায়গায় ধরে রাখতে সাহায্যকারী হাড় এবং তন্তু (fiber) নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে দাঁত ফেলে দেওয়ার প্রয়োজন হয়।

কারণ

পেরিওডন্টাইটিস প্লাক থেকে হয় বলে মনে করা হয়। এই প্লাক ব্যাকটেরিয়া থেকে সৃষ্টি হয়। যখন স্টার্চ এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার ব্যাক্টেরিয়ার সংস্পর্শে আসে তখন মুখের ভিতরে এই প্লাক জমতে দেখা জায়। ব্রাশ এবং ফ্লসিং এর মাধ্যমে প্লাক পরিষ্কার করা যায়। কিন্তু সাধারণত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই প্লাক পুনরায় সৃষ্টি হয়।

প্লাক দুই থেকে তিন দিনের মত মুখের ভিতর জমে থাকলে মাড়ির গোড়াতে শক্ত হয়ে দাঁতের পাথর (টারটার) সৃষ্টি করে। লালার খনিজ উপাদান থেকেও এই পাথর সৃষ্টি হতে পারে। দাঁতে পাথর হলে প্লাক পরিষ্কার করা কষ্টসাধ্য হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে এগুলি ব্যাকটেরিয়ার ভাণ্ডার হিসেবে কাজ করে।

প্লাক এবং এই পাথর যতক্ষণ দাঁতে অবস্থান করবে ততো বেশি ক্ষতি হবে। শুরুর দিকে এরা সাধারণত দাঁতের চারপাশের মাংস/মাড়িতে জ্বালাপোড়া এবং প্রদাহ সৃষ্টি করে। একে জিঞ্জিভাইটিস বলা হয় যা পেরিওডন্টাল ডিজিজ এর মধ্যবর্তী স্তর।

ইনফ্লামেশন বা প্রদাহ চলতে থাকলে দাঁত ও মাড়ির সংযোগস্থলে প্লাক, টারটার এবং ব্যাকটেরিয়া জমতে থাকে। ব্যাকটেরিয়া এন্ডোটক্সিন (ব্যাক্টেরিয়ার মেটাবলিজমের বিপাকীয় ক্রিয়ার জন্য উৎপন্ন পদার্থ) জমা করে, যা দাঁতের আশেপাশে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করার জন্য বিশেষভাবে দায়ী। সময়ের সাথে সাথে এই গর্ত আরও গভীর হয় এবং আরও ব্যাকটেরিয়া জমা হয়। অবশেষে এই ব্যাকটেরিয়া মাড়ির টিস্যুকে আক্রমণ করা শুরু করে। এই ইনফেকশনের কারণে টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত এবং হাড় ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। হাড়ের অধিক ক্ষতি হলে একটি বা একাধিক বেশী দাঁত হারানোর সম্ভাবনা থাকে। 

লক্ষণ

এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসকেরা নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি চিহ্নিত করে থাকেন

চিকিৎসা

চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত ঔষধগুলি গ্রহণ করার পরামর্শদিয়ে থাকেন:  

 

cephradine clindamycin phosphate
metronidazole penicillin

চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত টেস্টগুলি করার পরামর্শদিয়ে থাকেন:  

ডেন্টাল প্রসিডিউরস (Dental procedures)

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

যে সকল কারণে এই রোগের  ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে সেগুলি হল:

  • জিঞ্জিভাইটিস।
  • বংশগত কারণ।
  • দাঁত নিয়মিত পরিষ্কার না করা।
  • ধূমপান এবং তামাকের ব্যবহার।
  • ডায়বেটিস।
  • বার্ধক্য।
  • লিউকেমিয়া (leukemia), HIV/AIDS অথবা কেমোথেরাপি (chemotherapy) ইত্যাদি কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া।
  • পুষ্টিহীনতা।
  • স্টেরয়ড জাতীয় ঔষধের ব্যবহার, মৃগী রোগ প্রতিরোধক ঔষধ, ক্যান্সার থেরাপি দেওয়ার সময় ব্যবহৃত ঔষধ, ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার (calcium channel blockers) এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল (oral contraceptives) গ্রহণ।
  • হরমোন পরিবর্তন (প্রেগন্যান্সি/গর্ভাবস্থায় অথবা মেনোপোজ (menopause) হলে হরমোনের পরিবর্তন হয়)।
  • খাবার বা ঔষধের অপব্যবহার।
  • ত্রুটিপূর্ণ দাঁত বাঁধাই।
  • দাঁতের সাহায্যে স্বাভাবিক নিয়মে খাবার চিবাতে না পারা।
  • গর্ভাবস্থা।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গ: পুরুষদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। মহিলাদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

জাতি: শ্বেতাঙ্গ এবং হিস্পানিকদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ১ গুণ কম। কৃষ্ণাঙ্গ এবং অন্যান্যদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তর: গবেষণায় দেখা গেছে যে, দাঁত এবং মাড়ির রোগের কারণে অন্যান্য মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। যাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভালো তাদের মাড়ি থেকে এই ব্যাকটেরিয়া রক্তে প্রবাহিত হলেও কোন ক্ষতি করে না। কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই অণুজীবগুলো থেকে স্ট্রোক বা হৃৎপিণ্ডে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। মাড়ির সমস্যা থেকে ডায়াবেটিস রোগ আরও গুরুতর হতে পারে।

উত্তরঃ  না, বয়স বাড়ার সাথে এ রোগের কোনো সম্পর্ক নেই। সঠিকভাবে দাঁতের যত্ন নিলে এবং নিয়মিত দন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে পেরিওডেন্টাল ডিজিজ বয়সের সাথে সাথে কমানো সম্ভব।

উত্তরঃ গভীরভাবে দাঁত পরিষ্কার করতে দন্ত্য চিকিৎসক, পেরিওডেন্টিস্ট অথবা ডেণ্টাল হাইজিনিস্টরা (dental hygienist) স্কেলিং ও রুট প্ল্যানিং-এর মাধ্যমে প্লাক পরিষ্কার করে থাকেন। স্কেলিং বলতে মাড়ির গোড়া থেকে টারটার তুলে ফেলাকে বোঝায়। রুট প্ল্যানিং এর মাধ্যমে দাঁতের গোড়ার অমসৃণ দাগ যেখানে জীবাণু জমা হয়ে থাকে তা পরিষ্কার করা হয়, এবং এ রোগের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করা হয়।

উত্তরঃ  এ রোগের চিকিৎসা করা না হলে দাঁত হারানোর সম্ভাবনা থাকে। মাড়ির রোগ থেকে বয়স্কদের দাঁত হারানোর সম্ভাবনা বেশি থাকে।

হেলথ টিপস্‌

পেরিওডন্টাইটিস প্রতিরোধে নিম্নোক্ত উপায় অবলম্বন করা যেতে পারেঃ

  • নিয়মিত দন্ত্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
  • নরম টুথব্রাশ ব্যবহার করতে হবে এবং প্রতি তিন থেকে চার মাস পর পর ব্রাশ পরিবর্তন করতে হবে।
  • প্লাক এবং টারটার অপসারণের জন্য ইলেক্ট্রিক টুথব্রাশ ব্যবহার করা শ্রেয়।
  • প্রতিদিন অন্তত দুইবার অথবা প্রত্যেকবার খাবারের পর ব্রাশ করা ভালো।
  • প্রতিদিন ফ্লস করতে হবে।
  • দাঁতের মাঝখানে প্লাক কমানোর জন্য নিয়মিত মুখ পরিষ্কার করতে হবে।
  • ব্রাশ এবং ফ্লসিং-এর সাথে সাথে টুথপিক এবং সূচালো কাঠি দিয়ে দাঁতের মধ্যবর্তী স্থান পরিষ্কার করতে হবে। 

বিশেষজ্ঞ ডাক্তার

ডাঃ মোঃ সামিউল হাসান মিলার

ডেন্টিস্ট্রি ( Dentistry)

বিডিএস

ডাঃ সুফিয়া নাসরিন (রিতা)

ডেন্টিস্ট্রি ( Dentistry)

বিডিএস, এফসিপিএস(অর্থোডোনটিস)

ডাঃ মারুফ হোসেন(সুজন)

ডেন্টিস্ট্রি ( Dentistry)

বিডিএস(ঢাকা ডেন্টাল কেলেজ), এমপিএইচ(পাবলিক হেলথ ডেন্ট্রিস্ট)

ডাঃ মোহসিনা সুলতানা

ডেন্টিস্ট্রি ( Dentistry)

বিডিএস, পিজিটি, ডেন্টিস্ট্রি(শহীদ সোহরাওয়ার্দি হাসপাতাল), পিজিটি অর্থোডন্টিক(ঢাকা ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতাল)

ডাঃ মোঃ আবুল হাশেম

ডেন্টিস্ট্রি ( Dentistry)

বিডিএস, পিজিটি, এমপিএইচ, পিএইচডি

ডাঃ মোঃ রেজাউল করিম

ডেন্টিস্ট্রি ( Dentistry)

বিডিএস(ঢাকা), বিসিএস(স্বাস্থ্য), এমএস-ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জারী(ডিইউ)

ডাঃ মোঃ মাঈনুল ইসলাম(মুরাদ)

ডেন্টিস্ট্রি ( Dentistry)

বিডিএস(ডিডিসি), পিজিটি(কনজারভেটিভ ডেন্টাল), এমপিএইচ(ডেন্টাল পাবলিক হেলথ্‌)

ডাঃ মোঃ মাহবুবুর রহমান

ডেন্টিস্ট্রি ( Dentistry)

বিডিএস , ডিডিএস , পিএইচডি