অস্টিওমায়েলাইটিস হলো মূলতঃ অস্থি বা হাড়ের ইনফেকশন। ইনফেকশন রক্তের সাথে মিশে অস্থিতে পৌঁছাতে পারে অথবা অস্থির কাছাকাছি অবস্থিত কোনো টিস্যু থেকেও ইনফেকশন অস্থিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আবার কোনো অস্থিতে আঘাত বা ক্ষত থেকেও অস্টিওমায়েলাইটিস হতে পারে।
শিশুদের ক্ষেত্রে পা এবং উর্ধ্ব বাহুর লম্বা হাড়ে অস্টিওমায়েলাইটিস হয়ে থাকে। অপরদিকে, প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে মেরুদন্ডের অস্থিতে (ভার্টিব্রা) এই সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। ডায়েবেটিস আক্রান্ত রোগীর ফুট আলসারের সমস্যা থাকলে পায়ে অস্টিওমায়েলাইটিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
পূর্বে এই রোগের কোনো চিকিৎসা ছিল না। তবে বর্তমানে বিভিন্ন উপায়ে এর চিকিৎসা সম্ভব। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সার্জারির মাধ্যমে অস্থির আক্রান্ত অংশটুকু অপসারণ করা হয়। পরবর্তীতে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয় যা সাধারণত কমপক্ষে ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত ইন্ট্রাভেনাসলি বা ইনজেকশনের মাধ্যমে নিতে হয়।
কারণ
অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্ট্যাফাইলোকোক্কাস (staphylococcus) নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এই রোগ হয়ে থাকে। এই ব্যাকটেরিয়া যেকোনো সুস্থ ব্যক্তির নাক ও ত্বকে উপস্থিত থাকতে পারে। বিভিন্ন উপায়ে জীবানু বা ব্যাকটেরিয়া অস্থিতে প্রবেশ করতে পারে। যেমনঃ
রক্তপ্রবাহের সাথে মিশেঃ দেহের যেকোনো অংশ থেকে জীবানু রক্তপ্রবাহের সাথে মিশে অস্থির কোনো দুর্বল অংশে প্রবেশ করতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে অস্থির কোনো একটি নরম অংশ, (যা গ্রোথ প্লেটস্ নামে পরিচিত, যেমন বাহু বা পায়ের লম্বা অস্থির যেকোনো একপ্রান্তে অস্টিওমায়েলাইটিস হয়ে থাকে।
অস্থির আশেপাশের ইনফেকশন থেকেঃ গভীর কোনো কাটা বা ক্ষত থেকে জীবানু দেহের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে। এই কাটা বা ক্ষত স্থানটি ইনফেকটেড হয়ে পড়লে জীবানু খুব সহজেই কাছাকাছি অবস্থিত অস্থিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
সরাসরি জীবানুর সংক্রমনঃ যেমনঃ হাড় ভেঙ্গে গেলে ভাঙ্গা স্থনটি সরাসরি ত্বকের সংস্পর্শে আসলে অথবা যেকোনো সার্জারির সময় জীবানু সরাসরি অস্থিতে প্রবেশ করতে পারে।
লক্ষণ
এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসকেরা নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি চিহ্নিত করে থাকেন:
যেসকল কারণে অস্টিওমায়েলাইটিস হয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় সেগুলো নিম্নরূপঃ
দীর্ঘদিন ধরে স্কিন ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়া।
অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস
অপর্যাপ্ত রক্তপ্রবাহ
স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হয় এমন শারীরিক অসুস্থতা, যেমনঃ উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অনিয়ন্ত্রিত। কোলেস্টেরলের মাত্রা অথবা অভ্যাস যেমনঃ ধূমপান
ইমিউন সিস্টেম ডেফিসিয়েন্সি (Immune system deficiency)
প্রোস্থেটিক জয়েন্ট বা কৃত্রিম অস্থি প্রতিস্থাপন।
ইনজেকশনের মাধ্যমে ড্রাগের ব্যবহার।
ক্যান্সার
সিকেল সেল অ্যানিমিয়া (Sickle cell anaemia)
যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে
লিঙ্গঃ পুরুষদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। অপরদিকে, মহিলাদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা একগুণ কম।
জাতিঃ শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। অপরদিকে, কৃষ্ণাঙ্গ, হিস্পানিক ও অন্যান্য জাতির মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা একগুণ কম।
হেলথ টিপস্
অস্টিওমায়েলাইটিস প্রতিরোধের সহজ উপায় হলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা। কোনো স্থানে গভীরভাবে কেটে গেলে প্রথমত তা ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। ক্ষত স্থানটি পাঁচ মিনিট পর্যন্ত পরিষ্কার পানিতে ধোয়ার পর ব্যান্ডেজ করতে হবে।
ক্রনিক অস্টিওমায়েলাইটিসে আক্রান্ত হলে চিকিৎসার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসককে রোগীর সম্পূর্ণ মেডিকেল হিস্ট্রি জেনে নিতে হবে। ডায়াবটিক রোগীর ক্ষেত্রে পায়ে ইনফেকশনের যেকোনো লক্ষন দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
এর দ্রুত চিকিৎসার মাধ্যমে অন্যান্য শারীরিক সমস্যা যেমনঃ পুনরায় ইনফেকশন দেখা দেওয়া ও ব্যথা হওয়ার ঝুঁকি প্রতিরোধ করা সম্ভব। এছাড়াও যত দ্রুত এই রোগের চিকিৎসা শুরু করা যায় ততো দ্রুত রোগী ভালো হয়ে উঠে।