হাঁটু হলো মানবদেহের ভারবহনকারী অঙ্গ। বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাঁটুর অস্থিসন্ধি ও মাংসপেশী ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই অধিকাংশ বয়স্ক ব্যক্তি হাঁটুর সমস্যায় ভুগে থাকে। এছাড়া হাঁটুতে আঘাত পাওয়ার ফলে হাঁটুর কর্মক্ষমতা কমে যায় ও দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে। আবার হাঁটুর অস্থিসন্ধিতে অতিরিক্ত চাপ পড়ার কারণেও এ লক্ষণ দেখা দিতে পারে। হাঁটুতে তীব্র ব্যথা হলে পা নড়াচড়া করতে অসুবিধা হয় ও দৈনন্দিনের বিভিন্ন কাজে ব্যাঘাত ঘটে। তাই ক্রীড়াবিদদের হাঁটু ও পায়ের বাড়তি যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।
হরমোন ও গঠনগত বৈশিষ্ট্যের কারণে মহিলাদের হাঁটুর সমস্যা অপেক্ষাকৃত বেশি হয়ে থাকে। এছাড়াও যেসকল কারণে মহিলাদের এ লক্ষণ দেখা দেওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে যেগুলো হলো-
এ-সি-এল (ACL) হলো একটি কানেক্টিভ টিস্যু বা যোজক কলা। এটি রাবার ব্যান্ডের মত কাজ করে, এবং ইলাস্টিক এ্যানার্জি বা স্থিতিস্থাপকতা নিয়ন্ত্রণ করে। হাঁটা বা দৌড়ানোর সময় এই টিস্যু আমাদের পা ভাঁজ করে উপরে তুলতে সাহায্য করে। হঠাৎ করে অতিরিক্ত চাপ পড়ার ফলে এই টিস্যু ছিঁড়ে যেতে পারে। পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের এই কানেক্টিভ টিস্যুটি অপেক্ষাকৃত পাতলা হয়ে থাক, যে কারণে তা সহজে ছিঁড়ে যায়।
স্ট্রেন্থ রেশিয়ো (Strength ratios):
মহিলাদের হ্যামস্ট্রিংয়ের তুলনায় কোয়ার্ডিসেপ অপেক্ষাকৃত অধিক দৃঢ় হয়ে থাকে। ফলে হ্যামস্ট্রিংয়ের হাঁটু স্থির রাখার ক্ষমতা কমে যায়। এক্ষেত্রে কোয়ার্ডিসেপ ও হ্যামস্ট্রিংয়ের আদর্শ অনুপাত হলো ১০০:৬০ (শতাংশে)। হ্যামস্ট্রিংয়ের অনুপাত ৮০ শতাংশের কাছাকাছিও হতে পারে। অর্থাৎ হ্যামস্ট্রিং ও কোয়ার্ডিসেপ সমান দৃঢ়তাসম্পন্ন হতে হবে।
অবসাদ (Fatigue):
ক্লান্তি বা অবসাদের কারণে মাংসপেশী শিথিল হয়ে গেলে ভারবহন ও ব্যক্তির স্বাভাবিক চলনের জন্য কানেক্টিভ টিস্যুগুলো উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের অবসাদজনিত কারণে এ সমস্যা বেশি হয়ে থাকে।
যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে
লিঙ্গঃ মহিলাদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। পুরুষদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম।
জাতিঃ শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। হিস্প্যানিক ও অন্যান্য জাতির মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম।
হেলথ টিপস্
হাঁটুর বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি অনুসরণ করা যেতে পারে-
গাড়িতে থাকাকালীন সিট বেল্ট ব্যবহার করতে হবে।
অতিরিক্ত ভারী কোনো বস্তু বহন করা উচিৎ নয়। এছাড়াও নড়বড়ে বা ভারসাম্যহীন কোনো চেয়ার বা টেবিলে দাঁড়ানো বা বসা যাবে না।
যে কোনো ব্যায়ামের আগে ও পরে হালকা স্ট্রেচিং করে নিতে হবে।
মাংসপেশীতে টান বা চাপ পড়ে এমনভাবে কোনো কাজ করা যাবে না।
হাঁটুতে চাপ পড়ে এমন কাজ যেমন দীর্ঘক্ষণ হাঁটু ভাঁজ করে কাজ করা বা ঢালু স্থান থেকে দৌড়ে নামা ইত্যাদি এড়িয়ে চলতে হবে।
পায়ের জন্য আরামদায়ক ও সঠিক মাপ অনুযায়ী জুতা পরতে হবে। হাই হিল জুতা পরা উচিৎ নয়। বিশেষ করে দৌড়ানো বা টেনিস খেলার সময় খেলার উপযোগী জুতা পরা উচিৎ।