তোতলানোর সমস্যা (Stuttering or stammering)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

তোতলানো হচ্ছে কথা বলা বা শব্দ উচ্চারণের সমস্যা। তোতলানোর সমস্যা বিভিন্ন রকম হতে পারে। যেমন- কথা বলার সময় অনিচ্ছাকৃতভাবে নির্দিষ্ট কোনো শব্দের পুনরাবৃত্তি হওয়া, শব্দের প্রথম অক্ষর টেনে লম্বা করে বলা এবং কথা বলার সময় হঠাৎ করে কথা আটকে যাওয়া। এই সমস্যা রয়েছে এমন ব্যক্তিরা মুখ নাড়ানোর চেষ্টা করলে তাদের মুখ থেকে হালকা থুতু বের হয় কিন্তু কথা স্পষ্টভাবে উচ্চারিত হয় না।

তোতলানোর সমস্যা প্রধানত দুই প্রকারের হয়ে থাকে। যথক্রমে-

  • ডেভেলাপমেন্টাল স্ট্যামারিং (Developmental stammering): এই সমস্যা হলে শিশুরা প্রথম কথা বলা শেখার সময় একটি শব্দ বা সম্পূর্ণ বাক্যটি পুনরাবৃত্তি করে থাকে। তোতলানোর এই সমস্যা প্রায় প্রত্যেক শিশুরই হয়ে থাকে, যা সময়ের সাথে ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যায়। এক্ষেত্রে কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না।
  • অ্যাকুয়ার্ড বা লেট-অনসেট স্ট্যামারিং (Acquired or late-onset stammering): প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি বা ৯-১১ বছর বয়সী শিশুর মধ্যে এই তোতলানোর সমস্যা দেখা দেয়। মাথায় গুরুতর আঘাত পেলে, স্ট্রোক হলে, নিউরোলোজিক্যাল ডিজিজ বা স্নায়ুতন্ত্রে সমস্যা দেখা দিলে স্পষ্টভাবে কথা বলতে না পারা ও তোতলানোর সমস্যা শুরু হয়। এছাড়াও মানসিক আঘাত বা নির্দিষ্ট কিছু ঔষধ ব্যবহারের কারণেও এ সমস্যা হতে পারে।

কারণ

বিভিন্ন কারণে এই লক্ষণ দেখা যেতে পারে, যেমন: 

সংশ্লিষ্ট লক্ষণসমূহ

এই লক্ষণের সাথে অন্যান্য যেসকল লক্ষণ দেখা যেতে পারে সেগুলো হলো:

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

বিভিন্ন কারণে তোতলানোর সমস্যা দেখা দেওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে। যেমন- পরিবারের কোনো সদস্যের এই সমস্যা থাকলে শিশুদের মধ্যে তোতলানোর প্রবণতা দেখা যায়। শৈশবে মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হলে বা অন্য কোনো কথা বলার সমস্যা থাকলে এ লক্ষণ দেখা দেওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও বাবা-মা শিশুর প্রতি উচ্চাকাঙ্ক্ষা পোষণ করলে শিশুর মধ্যে মানসিক চাপ কাজ করে, যার ফলে সে স্পষ্টভাবে কথা বলতে পারে না ও তাদের মধ্যে তোতলানোর প্রবণতা দেখা দেয়।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গ: মহিলাদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। পুরুষদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

জাতি: কৃষ্ণাঙ্গদের ক্ষেত্রে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে।  অন্যান্য জাতির ক্ষেত্রে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ২ গুণ বেশি। শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম। হিস্প্যানিকদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ৪১ গুণ কম।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তর: কোনো কোনো ক্ষেত্রে শারীরিক বা মানসিক চাপের কারণে তোতলানোর সমস্যা বাড়তে পারে, আবার কখনো কখনো কমতে পারে। বিভিন্ন শারীরিক চাপ যেমন হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়ে গেলে বা রক্তচাপ বেড়ে গেলে তা তোতলানোর উপর কোনো প্রভাব ফেলে না। আবার ক্ষেত্রবিশেষে দেখা যায়, মানসিক চাপ তোতলানোর সমস্যাকে প্রশমিত করে। যেমনঃ অনেক ব্যক্তি যারা স্পষ্টভাবে কথা বলতে পারে না, তারা ভীত বা আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়লে আপনাআপনি স্পষ্টভাবে কথা বলতে সক্ষম হয়। মস্তিষ্কে অবস্থিত বিভিন্ন জৈব-রাসায়নিক উপাদানের (বিশেষ করে, এড্রেনালিন ও ডোপামিন) অন্তঃপ্রতিক্রিয়ার ফলে এমন হয়ে থাকে।

টাইম প্রেসার বা নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করার চাপ, কগনেটিভ স্ট্রেস এবং জনসম্মুখে কথা বলতে ভয় কাজ করলে তা তোতলানোর সমস্যাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। অনেকেই মনে করে মনোযোগে বিঘ্ন ঘটলে তা তোতলানোর প্রবণতা কমিয়ে দেয়। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে এই তথ্যটি সত্য নয়।

সাধারণত এই সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি বাক্যের প্রথম শব্দ, শব্দের প্রথম অংশ বা কন্টেট ওয়ার্ড (content word) (বাক্যের অন্তর্ভুক্ত যে শব্দ বাক্যকে অর্থপূর্ণ করে তোলে) বারবার উচ্চারণ করে বা টেনে কথা বলে। কন্টেট ওয়ার্ডটি স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করতে না পারায় অন্যরা কথার সঠিক অর্থ ধরতে পারে না।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে কথা বলার সময় তোতলানোর সমস্যা বেড়ে যায়। যেমন- কারও নাম উচ্চারণ, টেলিফোনে বা জনসম্মুখে কথা বলা এবং সম্মানিত ব্যক্তির সাথে কথা বলার সময় এ সমস্যার আরো অবনতি ঘটে।

আবার একই কথা বারবার বললে বা একা একা নিচু স্বরে কথা বলার সময় তোলানোর প্রবণতা থাকে না। কথা বলার সময় তোতলানোর সমস্যা থাকা সত্ত্বেও অনেক ব্যক্তি স্পষ্ট উচ্চারণে বই পড়তে পারে।

মস্তিষ্কে ডোপামিনের মাত্রায় তারতম্য দেখা দিলে তা তোতলানোর সমস্যাকে প্রভাবিত করে। এছাড়াও একজন ব্যক্তির মানসিক অবস্থা বা আতঙ্ক, ভয়-ভীতি, হতাশার মতো আবেগ এ সমস্যার উপর প্রভাব ফেলে।

হেলথ টিপস্‌

উত্তর: তোতলানোর সমস্যা দেখা দিলে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি অনুসরণ করা যেতে পারে-

প্রথমত তোতলানোর ধরন বা প্যাটার্ন চিহ্নিত করুন। অর্থাৎ আপনি কোনো নির্দিষ্ট অক্ষর বা শব্দাংশ পুনরাবৃত্তি করছেন কিনা, বা টেনে বলছেন কিনা অথবা কোন কোন অবস্থাতে এ সমস্যার অবনতি হচ্ছে তা চিহ্নিত করুন।

কথা বলার সময় তোতলানোর প্রবণতা ধীরে ধীরে কমিয়ে আনার চেষ্টা করুন। এজন্য কথা বলার সময় তাড়াহুড়া করা যাবে না, এবং যেকোনো একটি বাক্য দুই থেকে তিনবার স্পষ্টভাবে বলার চেষ্টা করতে হবে।

এই সমস্যার কারণে অনেকের মধ্যে বা জনসম্মুখে কথা বলতে আপনার মধ্যে কোনো ভয় কাজ করলে তা দূর করার চেষ্টা করুন।

দৈনন্দিন জীবনে আপনার আশেপাশের মানুষের কথা মনোযোগ সহকারে শোনার চেষ্টা করুন। এর মাধ্যমে আপনি খেয়াল করবেন প্রায় প্রত্যেক মানুষই স্বাভাবিক ভাবে কথা বলার সময় কখনো না কখনো দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগে। আপনি এও বুঝতে পারবেন যে, কথা বলা ও তোতলানোর মধ্যে পরিষ্কার কোনো পার্থক্য নেই। এই অভিজ্ঞতা আপনার মধ্যে আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।