ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ (Chronic obstructive pulmonary disease, COPD)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

রোগটি সি-ও-পি-ডি (COPD) ও ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ লাং ডিজিজ (Chronic Obstructive Lung Disease) নামেও পরিচিত।

ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ বলতে ফুসফুসের একই শ্রেণীভুক্ত কিছু রোগকে বোঝায়, যেগুলি বায়ু চলাচল বাধাগ্রস্ত করে এবং শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যার সৃষ্টি করে।

সর্বাধিক পরিচিত ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ হল এমফাইসিমা (Emphysema) এবং ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস (chronic bronchitis)। শ্বাসনালীর ভিতরের দেওয়ালে সৃষ্ট ইনফ্লামেশনকে (প্রদাহ) ক্রনিক ব্রঙ্কাইটস বলে। শ্বাসনালী ফুসফুসে বায়ু বহন করে আনে, এবং ফুসফুস থেকে বাইরে নিয়ে যায়। এমফাইসিমা তখন দেখা দেয় যখন ফুসফুসের ব্রঙ্কিওলসের (বায়ু গমনের ক্ষুদ্রতম পথ) শেষ প্রান্তের বায়ুথলিগুলি (অ্যালভিওলাই, alveoli) ক্রমান্বয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে।

সি-ও-পি-ডি (COPD)-এর কারণে ফুসফুসের ক্ষতি হলে, তা উপশম করা সম্ভব নয়। তবে চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে রোগটির লক্ষণগুলিকে নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষতির মাত্রাকে কমানো যেতে পারে।

কারণ

ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ মূল কারণ হল তামাক সেবন। আলো-বাতাসে পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই এমন ঘরে রান্না বা কোনো দ্রব্য তাপ দেওয়ার সময় জ্বালানি পোড়ানোর ফলে সৃষ্ট ধোঁয়ার কারণে মহিলাদের এই রোগ হতে পারে। সাধারণত উন্নয়নশীল দেশে মহিলাদের এই রোগ হয়ে থাকে।

২০ শতাংশ ধূমপায়ীর এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিছু কিছু ধূমপায়ীর ফুসফুসের অন্যান্য রোগও হতে পারে। এই রোগগুলি অনেক সময় ভুলবশত  ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ হিসেবে নির্ণিত  হতে পারে। এই বিভ্রান্তি দূর করার জন্য পূর্ণাঙ্গরূপে আক্রান্ত ব্যক্তিকে পরীক্ষা করা প্রয়োজন।

ফুসফুস যেভাবে আক্রান্ত হয়

বাতাস শ্বাসনালী (ট্রাকিয়া ও ব্রঙ্কাস) (Trochia and Bronchi) দ্বারা ফুসফুসে প্রবেশ করে। ফুসফুসের মধ্যে এই নালী গাছের শাখার মতো ছোট ছোট নালীতে বিভক্ত। এগুলি বায়ুপূর্ণ থলিতে গিয়ে শেষ হয়। এই বায়ুপূর্ণ থলিগুলির আবরণ/দেওয়াল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রক্তনালীতে পরিপূর্ণ (ক্যাপিলারিস, capillaries)। নিঃশ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণকৃত অক্সিজেন এই রক্তনালীর মধ্যে দিয়ে রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে, এবং একই সময়ে কার্বন-ডাই-অক্সাইড—বিপাকীয় প্রক্রিয়ার বর্জ্য--নিঃশ্বাসের সাথে বেরিয়ে যায়।

শরীর থেকে ফুসফুসের বায়ু নির্গমনের প্রক্রিয়া শ্বাসনালী ও বায়ুথলির নমনীয়তার উপর নির্ভরশীল। সি-ও-পি-ডি (COPD) কারণে শ্বাসনালী ও বায়ুথলিগুলির নমনীয়তা কমে যায়, এবং আংশিকভাবে সেগুলি ক্ষতিগ্রস্তও হতে পারে। এই কারণে শ্বাস ত্যাগ করার পরও কিছু পরিমাণ বাতাস ফুসফুসে থেকে যেতে পারে।

বায়ুপথের বাধার কারণ:

এমফাইসিমা: ফুসফুসের এই রোগের কারণে বায়ুথলির আবরণ এবং নমনীয় তন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নিশ্বাস ত্যাগের সময় বায়ু চলাচলের ক্ষুদ্র পথগুলি কুঁচকে যায়, ফলে ফুসফুস থেকে বাতাস নির্গত হওয়ার প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।

ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস: এই রোগের কারণে শ্বাসনালীগুলিতে ইনফ্লামেশন হয়, এবং সেগুলি সংকুচিত হয়ে যায়। এর কারণে ফুসফুস অধিক পরিমাণে শ্লেষ্মা উৎপন্ন করে, যার জন্য সংকুচিত শ্বাসনালীগুলিতে আরও বেশি আবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। বায়ু চলাচলের পথ পরিষ্কারের চেষ্টা করলে কাশি ক্রনিক (chronic) আকার ধারণ করে।

সিগারেট ও অন্যান্য

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দীর্ঘদিন ধূমপানের জন্য সৃষ্ট ক্ষতির কারণে ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ হয়ে থাকে। তবে জিনগত কারণেও এই রোগ হতে পারে। ২০ শতাংশ ধূমপায়ীঁ সাধারণত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে।

পরোক্ষ ধূমপান, পাইপ স্মোক ও বায়ু দূষণের কারণে এই রোগ হতে পারে। এছাড়া ধূলা, ধোঁয়া ও বাষ্পপূর্ণ  পরিবেশে কাজ করলেও ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আলফা-১-অ্যান্টিট্রিপসিনের [Alpha-1-antitrypsin (AAt)] ঘাটতি

ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ১ শতাংশ এক ধরনের জিনগত অস্বাভাবিকতা/সমস্যার কারণে এই রোগে আক্রান্ত হয়। এই সমস্যার কারণে আলফা-১-অ্যান্টিট্রিপসিন নামক এক ধরনের প্রোটিনের পরিমাণ কমে যায়। আলফা-১-অ্যান্টিট্রিপসিন লিভারে উৎপন্ন হয়, এবং ফুসফুসকে রক্ষা করতে রক্তপ্রবাহে নিঃসরিত হয়। আলফা-১-অ্যান্টিট্রিপসিনের ঘাটতির কারণে লিভার ও ফুসফুস উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। শুধু ধূমপায়ীদের নয়, নবজাতক ও শিশুদের লিভারও এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সাধারণ ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজের জন্য যে চিকিৎসা দেওয়া হয়, আলফা-১-অ্যান্টিট্রিপসিনের ঘাটতিজনিত ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজের জন্যও সেই একই চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিছু আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে ঘাটতি হওয়া এ-এ-টি প্রোটিন( AAt protein)প্রতিস্থাপন করা হয়। এর মাধ্যমে ফুসফুসের অধিকতর ক্ষতি প্রতিরোধ করা যেতে পারে।

লক্ষণ

এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসকেরা নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি চিহ্নিত করে থাকেন:

চিকিৎসা

 চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত ঔষধগুলি গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন: 

aminophylline amoxycillin
azithromycin budesonide
cefuroxime clarithromycin
doxycycline fluticasone
ipratropium bromide levosalbutamol sulphate
methyl prednisolone acetate prednisolone
salbutamol salmeterol
theophylline anhydrous

চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত টেস্টগুলি করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন: 

আর্টেরিয়াল ব্লাড গ্যাসেস (এ-বি-জি-এস) (Arterial blood gases (ABGs))
ইলেক্ট্রোলাইটস, সেরাম (Electrolytes, serum)
পালমোনারী ফাংশন টেস্ট (Pulmonary function test)
এক্স-রে, চেস্ট পি-এ ভিউ (X-ray, Chest P/A view)
স্পুটাম সি/এস (Sputum c/s)
আলফা-১ এন্টিট্রিপসিন (Alpha1 Antitrypsin)

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

নিম্নলিখিত বিষয়গুলি ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে:

  • তামাক সেবন: দীর্ঘদিন ধরে ধূমপান করলে ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। আপনি যতো বেশি ধূমপান করবেন, ঝুঁকি ততো বাড়বে। পাইপ, সিগার, মারিজুয়ানা সেবন এবং পরোক্ষ ধূমপানের জন্যও এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
  • অ্যাজমা আক্রান্ত ধূমপায়ী: অ্যাজমা আক্রান্ত ব্যক্তি ধূমপান করলে তার এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি আরও বৃদ্ধি পায়।
  • কর্মস্থলে ধূলা ও রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শ: কর্মস্থলে রাসায়নিক পদার্থের বাষ্প, ধোঁয়া এবং ধূলার কারণে ফুসফুসে অস্বস্তি ও জ্বালাপোড়া সৃষ্টি হতে পারে।
  • বয়স: ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়, তাই আক্রান্ত ব্যক্তির বয়স ৩০-৪০ বছর বয়স হলে এই রোগের লক্ষণ প্রথম দেখা যায়।
  • জেনেটিক্স: আলফা-১-অ্যান্টিট্রিপসিনের ঘাটতিজনিত একটি জিনগত অস্বাভাবিকতার কারণে অনেক ক্ষেত্রে এই রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। এছাড়া অন্যান্য কিছু জিনগত বিষয়ের কারণে কিছু ধূমপায়ীর এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গ: পুরুষ ও নারী উভয়ের মধ্যেই এই রোগ নির্ণয় হওয়ার গড়পরতা সম্ভাবনা থাকে।

জাত:  শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা থাকে। হিস্প্যানিক, কৃষ্ণাঙ্গ এবং অন্যান্য জাতির মানুষের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তরঃ এই রোগের কারণে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। এছাড়া এতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা ব্যায়াম করার সময় দুর্বল বোধ করেন।

উত্তরঃ পালমোনারি ফাংশন টেস্টিংয়ের (Pulmonary function testing) মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি এই রোগে আক্রান্ত কিনা, তা নির্ণয় করা যায়। এছাড়া রোগটি কোন পর্যায়ে আছে, তাও এই টেস্টের মাধ্যমে বোঝা সম্ভব।

উত্তরঃ এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরও একজন ব্যক্তি দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকতে পারেন।

তবে আক্রান্ত ব্যক্তির আয়ুষ্কাল রোগটির মাত্রার উপর নির্ভর করে। তবে সাধারণত অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ আক্রান্ত হওয়ার পরও একজন ব্যক্তি দীর্ঘ সময় বাঁচতে পারেন।

হেলথ টিপস্‌

অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজের কারণ অত্যন্ত সুস্পষ্ট, তাই রোগটিকে প্রতিরোধ করারও সুনির্দিষ্ট উপায় আছে। যেহেতু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগটি ধূমপানের কারণে হয়ে থাকে, তাই ধূমপান ত্যাগই এটি প্রতিরোধ করার সবচেয়ে কার্যকারী উপায়।

যারা দীর্ঘদিন ধরে ধূমপান করছেন, তাদের পক্ষে ধূমপান ত্যাগ করা কঠিন। তবে চেষ্টা করলে আপনি অবশ্যই ধূমপান ত্যাগ করতে পারবেন। প্রয়োজনে এ ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ধূমপান ত্যাগ করলে আপনার ফুসফুসকে আপনি সম্ভাব্য ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে পারবেন।

কর্মস্থলে রাসায়নিক পদার্থের বাষ্প ও ধূলাবালিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করলে অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। আপনি এ ধরনের পরিবেশে কাজ করলে কর্তৃপক্ষের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলুন। প্রয়োজনে বাষ্প ও ধূলা প্রতিরোধকারী সরঞ্জাম ব্যবহার করুন।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তার

ডাঃ অশোক দত্ত

কার্ডিওলজি ( হার্ট) ( Cardiology), মেডিসিন ( Medicine)

এমবিবিএস, এফসিপিএস(মেডিসিন), এমডি(কার্ডিওলজি), এএফএসিসি(ইউএসএ)

ডাঃ মোঃ আবুল খায়ের

মেডিসিন ( Medicine), কার্ডিওলজি ( হার্ট) ( Cardiology)

এমবিবিএস(ডিএমসি), ডি-কার্ড(এনআইসিভিডি), এফসিপিএস(কার্ডিওলজি)

ডাঃ মোঃ মতিউর রহমান

মেডিসিন ( Medicine), রিউম্যাটোলজি ( বাতরোগ) ( Rheumatology)

এমবিবিএস, , এমডি(ইন্টারনাল মেডিসিন), , এফসিপিএস(মেডিসিন), এফএসিআর(ইউএসএ), এপলার ক্লিনিক ফেলোশিফ ট্রেনিং ইন রিউম্যাটোলজ

ডাঃ জয়ন্ত কুমার সাহা

মেডিসিন ( Medicine), কার্ডিওলজি ( হার্ট) ( Cardiology)

এম বি বি এস, ডি-কার্ড, এফ সি পি এস (মেডিসিন)

অধ্যাপক ডাঃ মোঃ হাবিবুর রহমান

মেডিসিন ( Medicine), গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি ( খাদ্যনালী, পরিপাকতন্ত্র) ( Gastroenterology)

এমবিবিএস , এফসিপিএস (মেডিসিন) , এমডি (গ্যাষ্টোএন্টারোলজি)

ডাঃ মোঃ আশরাফ উদ্দিন আহমেদ

মেডিসিন ( Medicine), ডায়াবেটোলজিষ্ট ( Diabetologist)

এমবিবিএস, সিসিডি (বারডেম), এফসিপিএস (মেডিসিন)

অধ্যাপক ডাঃ পরিতোষ কুমার বড়াল

মেডিসিন ( Medicine)

এমবিবিএস, এফসিপিএস, এমডি

ডাঃ মোহাম্মদ মোরতজা খায়ের

মেডিসিন ( Medicine), পালমোনোলজি ( ফুসফুস) ( Pulmonology)

এমবিবিএস, এমসিপিএস(মেডিসিন), এমডি(চেস্ট)