ডায়পার র‍্যাশ/ফুসকুড়ি (Diaper rash)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

ডায়পার র‍্যাশ/ফুসকুড়ি এক ধরনের ত্বকের প্রদাহ (dermatitis)। ডায়পার র‍্যাশের ফলে শিশুর নিতম্বে লাল লাল ছোপের সৃষ্টি হয়।

শিশুর পরিহিত ভেজা ডায়পার সময়মত পরিবর্তন না করলে, ডায়পারের ওপর প্লাস্টিকের প্যান্ট পরালে, শিশুকে প্রথমবারের মত শক্ত খাবার দেওয়া হলে, শিশুকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো হলে বা ডায়রিয়ার কারণে ডায়পার র‍্যাশ হতে পারে। আবার যেসব মায়েরা শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ান তারা নির্দিষ্ট কিছু খাবার খেলে শিশুর ডায়পার র‍্যাশ হয়ে থাকে। তবে কিছু ঘরোয়া চিকিৎসার সাহায্যে খুব সহজে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

কারণ

বিভিন্ন কারণে শিশুর ডায়পার র‍্যাশ হতে পারে। নিম্নে শিশুর ডায়পার র‍্যাশ হওয়ার কারণগুলো আলোচনা করা হলোঃ

  • ভেজা অবস্থায় দীর্ঘক্ষণ ডায়পার পরে থাকলে ডায়পার র‍্যাশ হয়ে থাকে। বিশেষ করে মলত্যাগের পর দীর্ঘসময় ধরে শিশুর ডায়পার পরিবর্তন করা না হলে শিশুর নরম ত্বকে র‍্যাশের সৃষ্টি হয়।
  • শিশুকে প্রথমবারের মত শক্ত খাবার দেওয়া হলে বা খাবারের তালিকায় কোনো পরিবর্তন হলে শিশুর মলেও পরিবর্তন আসে। একই সাথে শিশুর মলত্যাগের পরিমাণ বাড়তে পারে এবং এর ফলে ডায়পার র‍্যাশ হতে পারে। আবার যেসব মায়েরা শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ান তারা নির্দিষ্ট কিছু খাবার খেলে শিশুর ডায়পার র‍্যাশ হয়ে থাকে।
  • বেবি ওয়াইপস, নতুন ব্র্যান্ডের ডায়পার ও কাপড়ের তৈরি ডায়পার ধোয়ার জন্য বিভিন্ন পরিষ্কারক দ্রব্য যেমন ডিটারজেন্ট বা ব্লিচ ব্যবহারের ফলে শিশুর ডায়পার র‍্যাশ হতে পারে। এছাড়াও লোশন, পাউডার ও তেল ব্যবহারের জন্যও শিশুর ডায়পার র‍্যাশ হয়ে থাকে।
  • ব্যাকটেরিয়া বা ইস্ট ইনফেকশন ডায়পার র‍্যাশের আরেকটি কারণ। ত্বকের কোনো অংশে ইনফেকশন হলে তা ধীরে ধীরে ছড়াতে থাকে। শিশুর দেহের যেটুকু অংশ ডায়পার দ্বারা ঢাকা থাকে বিশেষ করে নিতম্ব, উরু ও যৌনাঙ্গে সহজে বাতাস চলাচল করতে পারে না। তাই এসব স্থানে খুব সহজে ইনফেকশন হয়ে থাকে এবং শিশুর ত্বকের ভাঁজে লাল লাল গুটির মত র‍্যাশ দেখা দেয়।
  • অ্যাকজিমা বা ত্বকে প্রদাহের সৃষ্টি হলে শিশুর ডায়পার র‍্যাশ হতে পারে। তবে এ্যাকজিমা বা ত্বকের প্রদাহ শরীরের অন্যান্য অংশগুলোকে বেশি আক্রান্ত করে থাকে।
  • শিশুকে আঁটসাঁটভাবে ডায়াপার পরালে র‍্যাশ হতে পারে।
  • অ্যান্টিবায়োটিক শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াসহ উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলোও নষ্ট করে থাকে। অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার ফলে শিশুর দেহে ইস্ট ইনফেকশন প্রতিরোধকারী ব্যাকটেরিয়াগুলো নষ্ট হয়ে যায় এবং র‍্যাশের সৃষ্টি হয়। আবার যেসব মায়েরা শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ান তাদের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলেও শিশুর ডায়পার র‍্যাশ হতে পারে।
  • ভেজা ডায়পার দীর্ঘসময় ধরে শিশুর ত্বকের সংস্পর্শে থাকলে ত্বকে লাল বর্ণের র‍্যাশের সৃষ্টি হয়।
  • বেবি ওয়াইপস, ডায়পার, ডিটারজেন্ট, সাবান, লোশন ও প্লাস্টিকের প্যান্টে ব্যবহৃত ইলাস্টিকের দ্বারা সৃষ্ট অ্যালার্জির জন্যও র‍্যাশ হতে পারে।
  • সেবোরিয়া হলো একপ্রকারের তৈলাক্ত ও হলুদ বর্ণের র‍্যাশ, যা সাধারণত মুখমণ্ডল, ঘাড় ও মাথায় হয়ে থাকে। এই র‍্যাশের কারণেও শিশুর ডায়পার র‍্যাশ হয়ে থাকে।

লক্ষণ

চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তিদের মধ্যে সাধারণত নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখতে পানঃ

চিকিৎসা

চিকিৎসকেরা এই রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নের ঔষধগুলো দিয়ে থাকেনঃ

amoxycillin + clavulanic acid bacitracin zinc, topical
clotrimazole, topical hydrocortisone acetate, topical
ketoconazole, topical miconazole, topical
nystatin, topical

চিকিৎসকেরা এই রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নের টেস্টগুলো দিয়ে থাকেনঃ

সি-বি-সি (কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট) (CBC, Complete Blood Count)
সিরাম জিঙ্ক (Serum zinc)
স্কিন স্ক্র্যপিং এম/ই ফর ফাঙ্গাস (skin scrapings M/E for fungus)

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

যেসকল কারণে শিশুর ডায়পার র‍্যাশ হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় সেগুলো হলো:

  • শিশুকে অপরিষ্কার রাখা।
  • শিশুকে আঁটসাঁটভাবে ডায়পার পরানো।
  • সাবান বা অন্যান্য পরিষ্কারক দ্রব্য দ্বারা সৃষ্ট এ্যালার্জি।
  • বারবার মলত্যাগ।
  • মলে এসিডের উপস্থিতি (ডায়রিয়া আক্রান্ত হলে)।
  • অ্যামোনিয়া।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গঃ পুরুষ  ও মহিলা উভয়ের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে।

জাতিঃ কৃষ্ণাঙ্গ, হিস্প্যানিক ও অন্যান্য জাতির মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে।  শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তরঃ সাধারণত ঘরোয়া চিকিৎসার সাহায্যেই ডায়পার র‍্যাশ সারিয়ে ফেলা সম্ভব। তাই এক্ষেত্রে চিকিৎসকের প্রয়োজন হয় না। তবে র‍্যাশের সাথে ফোড়া বা ফসকুড়ি, পুঁজসহ গুটি ও হলুদ ছোপ দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এছাড়া র‍্যাশের সাথে জ্বর হলে এবং ঘরোয়া চিকিৎসার পরও র‍্যাশ ভালো না হলে শিশুকে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে।

উত্তরঃ ডায়পার র‍্যাশ হলে শিশুর নিতম্ব লাল বর্ণ ধারণ করে। এ অংশটুকু হাত দিয়ে ধরলে ফোলা ও গরম অনুভূত হয়। আবার খোঁচা খোঁচা লাল দাগসহ শিশুর উরু ও পেটে গুটি দেখা দিলে সেটিও ডায়পার র‍্যাশ হতে পারে।

হেলথ টিপস্‌

শিশুকে নিয়মিত ডায়পার পরানো হলে ঐ স্থানটি অবশ্যই পরিষ্কার ও শুষ্ক রাখার মাধ্যমে ডায়পার র‍্যাশ প্রতিরোধ করা সম্ভব। তবে যতটা সম্ভব আপনার শিশুকে ডায়পার ছাড়াই রাখতে চেষ্টা করুন। শিশুকে যতবেশি ডায়পার ছাড়া রাখা যায় ততই ভালো। এছাড়া নিম্নলিখিত নিয়ম মেনে চলার চেষ্টা করুন:

  • সময়মত শিশুর ডায়পার পরিবর্তন করতে হবে, বিশেষ করে ডায়পার ভেজা থাকলে।
  • ডায়পার পরিবর্তনের পর ঐ স্থানটি নরম কাপড় বা তুলা ও পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
  • ডায়পার ঢিলাঢালাভাবে পরাতে হবে। খুব বেশি আঁটসাঁট করে পরালে বাতাস চলাচলে অসুবিধা হয় এবং শিশুর কোমর ও উরুতে চুলকানি দেখা দিতে পারে।
  • যেসব ডায়পারের শোষনক্ষমতা বেশি সেগুলো ব্যবহার করা উচিত। এতে ত্বক শুষ্ক থাকে ও ইনফেকশন কম হয়।
  • শিশুর ডায়পার পরিবর্তনের আগে ও পরে হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
  • ডায়পার র‍্যাশ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ক্রিম, মলম বা পাউডার ব্যবহার করতে হবে।
  • অ্যালকোহল বা সুগন্ধিযুক্ত বেবি ওয়াইপস বা রুমাল ব্যবহার করা উচিৎ নয়, এতে ত্বকে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে।
  • ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করা উচিত নয় কারন এটি শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে সাথে শিশুর ফুসফুসে প্রবেশ করতে পারে।
  • ডায়পারের উপরে প্লাস্টিকের প্যান্ট ব্যবহার করা উচিত নয়, এতে বাতাস চলাচলে অসুবিধা হয়।
  • কাপড়ের ডায়পার ব্যবহার করা হলে তা ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে, বিশেষ করে যদি শিশুর ডায়পার র‍্যাশ থাকে।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তার

ডাঃ মোঃ আসিফুজ্জামান

ডার্মাটোলজি এন্ড ভেনেরিওলজি ( চর্ম ও যৌন) ( Dermatology & Venereology)

এমবিবিএস(ডিএমসি), এফসিপিএস(চর্ম ও যৌন রোগ), ফেলো লেজার এন্ড স্কিন সার্জারী (থাইল্যান্ড)

ডাঃ মোঃ সফিকুল ইসলাম

ডার্মাটোলজি এন্ড ভেনেরিওলজি ( চর্ম ও যৌন) ( Dermatology & Venereology)

এমবিবিএস, ডিডিভি(ডিইউ), এমডি(ডার্মা), এমএমইডি

ডাঃ মোঃ ফয়েজ উল্লাহ্‌

ডার্মাটোলজি এন্ড ভেনেরিওলজি ( চর্ম ও যৌন) ( Dermatology & Venereology)

এমবিবিএস, এমপিএইচ, এমডি(চর্ম যৌন কোর্স)

ডাঃ মোঃ সাইফুল ইসলাম

মেডিসিন ( Medicine), পেডিয়াট্রিকস ( Pediatrics)

এমবিবিএস, এমপিএইচ, এমসিপিএস

ডাঃ শওকত ওসমান

পেডিয়াট্রিকস ( Pediatrics)

এমবিবিএস(ঢামেক), এফসিপিএস(কোর্স), বিসিএস(স্বাস্থ্য), আইএমসিআই(শিশু রোগ)

ডাঃ সৈয়দ মোঃ আল-আমিন

ডার্মাটোলজি এন্ড ভেনেরিওলজি ( চর্ম ও যৌন) ( Dermatology & Venereology)

এমবিবিএস(ঢাকা), , ডিপিডি(ইংল্যান্ড)

ডাঃ মোঃ আল-আমিন মৃধা

পেডিয়াট্রিকস ( Pediatrics), নিউন্যাটোলজি ( নবজাতক) ( Neonatology)

এমবিবিএস, এমসিপিএস, এফসিপিএস, এমডি(শিশু)

ডাঃ ফারুক আহমেদ

পেডিয়াট্রিকস ( Pediatrics)

এমবিবিএস(ঢাকা মেডিকেল কলেজ), বিসিএস(স্বাস্থ্য), এফএমডি(ইউএসটিসি), এফসিপিএস(শিশু শেষ পর্ব)