ত্বকের ফুসকুড়ি (Skin rash)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

লক্ষণটি চামড়া উঠে যাওয়া এবং অ্যাকজিমা ( Eczema) হিসেবেও পরিচিত।

ত্বকের ফুসকুড়ি বলতে ত্বকের এক ধরনের পরিবর্তনকে বোঝানো হয়, যা ত্বকের রঙ, আকৃতি ও গঠনের পরিবর্তন ঘটায়। ফুসকুড়ি শরীরের একটি নির্দিষ্ট অংশে বা শরীরের সমগ্র ত্বকে হতে পারে। এর ফলে ত্বকে রঙ পরিবর্তন, চুলকানি, গরম ভাব, ফোলা ভাব, খসখসে ভাব, শুষ্ক ভাব, ফাটল ও ব্যথা হওয়ার মতো বৈশিষ্ট্য দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যেহেতু বিভিন্ন কারণে ত্বকের ফুসকুড়ি হয়ে থাকে, তাই এর চিকিৎসাও বিভিন্ন ধরনের হতে পারে।

ত্বকের ফুসকুড়ি পরীক্ষা করার জন্য এর অবস্থা, আক্রান্ত ব্যক্তির অন্যান্য লক্ষণ, তার পেশা ও আক্রান্ত ব্যক্তি কোন কোন বস্তুর সংস্পর্শে এসেছে সেগুলি বিবেচনায় আনা উচিত।

কারণ

বিভিন্ন কারণে এই লক্ষণ দেখা যেতে পারে, যেমন:

অ্যালার্জি (Allergy) চুল পড়া (Alopecia)
জ্বরঠোসা (Cold sore) উকুন সমস্যা (Lice)
চিকেনপক্স (Chickenpox) কনট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস (Contact dermatitis)
ডায়পার র‍্যাশ/ফুসকুড়ি (Diaper rash) সিফিলিস (Syphilis)
গলার ইনফেকশন (Strep throat) এ্যাকজিমা (Eczema)
সেবোরিক ডার্মাটাইটিস (Seborrheic dermatitis) খাবারে অ্যালার্জি (Food allergy)
ত্বকের ছত্রাকের ইনফেকশন (Fungal infection of the skin) স্ক্যাবিস (Scabies)
বদহজম (Indigestion) গুড়াকৃমি রোগ (Pinworm infection)
সোরিয়াসিস (Psoriasis) হাইপোথার্মিয়া (Hypothermia)
ফাঙ্গাল ইনফেকশন অফ দি হেয়ার (Fungal infection of the hair) ক্যালাস (Callus)
হারপেনজিনা (Herpangina) এমপায়েমা (Empyema)
ডিজহাইড্রোসিস (Dyshidrosis) ইরাইথেমা মাল্টিফর্মি (Erythema multiforme)
রোজেশিয়া (Rosacea) লিচেন প্ল্যানাস (Lichen planus)
লিচেন সিমপ্লেক্স (Lichen simplex) মোলাস্কাম কন্টাজিওসাম (Molluscum contagiosum)
মোনোনিউরাইটিস (Mononeuritis) মায়োসাইটিস (Myositis)
স্ক্লেরোডার্মা (Scleroderma) অ্যাড্রেনাল ক্যান্সার (Adrenal cancer)
ওমফ্যালাইটিস (Omphalitis) সেবোরিক কেরাটোসিস (Seborrheic keratosis)
লাইম ডিজিজ (Lyme disease) স্পাইনোসেরিবেলার অ্যাটাক্সিয়া (Spinocerebellar ataxia)
পেম্ফিগাস (Pemphigus) পিটাইরিয়াসিস রোজিয়া (Pityriasis rosea)
ভাস্কুলাইটিস (Vasculitis) অ্যাথলেট'স ফুট (Athlete's foot)
অ্যাক্টিনিক কেরাটোসিস (Actinic keratosis) ব্যালানাইটিস (Balanitis)
পায়োজেনিক স্কিন ইনফেকশন (Pyogenic skin infection) ব্রণ (Acne)
ইষ্ট ইনফেকশন (Yeast infection)

সংশ্লিষ্ট লক্ষণসমূহ

এই লক্ষণের সাথে অন্যান্য যেসকল লক্ষণ দেখা যেতে পারে সেগুলো হলো:

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

নিম্নলিখিত পরিবেশগত বিষয়গুলি অ্যাকজিমা হওয়া বা এর মাত্রা বৃদ্ধি হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে:

  • উল, সিনথেটিক কাপড়, সাবান, ডিটারজেন্ট, কসমেটিক্স, পারফিউম, ধূলা-বালি, রাসায়নিক দ্রাবক ও  ক্লোরিনের  মতো ত্বকে প্রদাহ সৃষ্টিকারী পদার্থের ব্যবহার (skin irritating subsance)।
  • অতি উচ্চ তাপমাত্রা, নিম্ন তাপমাত্রা বা চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া (ঠাণ্ডা বা গরম আবহাওয়া, অথবা শুষ্ক বা অতি আর্দ্রতাপূ্র্ণ বাতাস)।
  • গোসল করার পর শরীরে আর্দ্রতার অভাব।

যেসব ব্যক্তির অ্যালার্জি আছে তাদের অ্যাকজিমা হওয়ার  ঝুঁকি বেশি থাকে। অ্যাকজিমার সাথে নিম্নোক্ত অ্যালার্জেনগুলি (অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী বস্তু) সম্পর্কযুক্ত হতে পারে- 

  • রেণু
  • পশুর চামড়ার শুষ্ক চূর্ণ।
  • ঘরের ধূলাবালিতে বিদ্যমান পরজীবী।
  • ছত্রাক
  • নির্দিষ্ট কিছু খাদ্য।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গ: পুরুষদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা থাকে। নারীদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

জাতি: শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম। কৃষ্ণাঙ্গ, হিস্প্যানিক ও অন্যান্য জাতির মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা থাকে।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তরঃ  না, অ্যাকজিমায় আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শের মাধ্যমে এটি অন্য কোনো ব্যক্তির শরীরে সংক্রমিত  হয় না। তবে অ্যাকজিমার বংশগত কারণ রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

উত্তরঃ না, অ্যাকজিমা একটি ক্রনিক রোগ। তবে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যে সব বিষয় অ্যাকজিমার সমস্যা ত্বরান্বিত করে সেগুলি এড়িয়ে চলে, নিয়মিত গোসল করে এবং আক্রান্ত স্থান সঠিকভাবে আর্দ্র রেখে অ্যাকজিমায় আক্রান্ত ব্যক্তি স্বস্তি পেতে পারেন।

উত্তরঃ এই সময়গুলিকে অ্যাকজিমা ফ্লেয়ার (eczema flare) বলে। উলের অমসৃণ কাপড়, উচ্চ তাপমাত্রা, ঘাম হওয়া ও মানসিক  চাপের মতো  বিষয়গুলি শুষ্ক ত্বকের সমস্যা ত্বরান্বিত করে অ্যাকজিমা ফ্লেয়ার সৃষ্টি করতে পারে।

হেলথ টিপস্‌

একজেমা নিয়ন্ত্রণের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলি অনুসরণ করতে পারেন-

  • অ্যাকজিমা ত্বরান্বিতকারী বিষয়গুলি সম্পর্কে সচেতন হওয়া: সুগন্ধি সাবান থেকে শুরু করে অনুজীব পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ের কারণে অ্যাকজিমার সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই কোন কোন বিষয়গুলি অ্যাকজিমার সমস্যা বৃদ্ধি করেছে সেগুলি চিহ্নিত করে সেগুলি এড়িয়ে চলতে হবে।
  • শুষ্ক ও চুলকানিযুক্ত স্থান আর্দ্র করা: অ্যাকজিমা নিয়ন্ত্রণ করার অন্যতম কার্যকর উপায় হল ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা। এজন্য প্রায়ই এটি ব্যবহার করা প্রয়োজন, বিশেষত শরীর ধোয়া ও গোসল করার পর। ভালো ফল পেতে সাধারণ সুগন্ধিহীন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। ময়েশ্চারাইজারে অ্যাডিটিভ (additive)ও রাসায়নিক পদার্থ আছে কীনা, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন, কারণ এই উপাদানগুলির জন্য ত্বকে বিরক্তি সৃষ্টি হতে পারে। মলম ও ক্রিমের মতো ঘন দ্রব্য ত্বককে সবচেয়ে কার্যকরভাবে সুরক্ষা দেয়।
  • ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ: তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার পরিবর্তনের কারণে অ্যাকজিমার সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অ্যাকজিমার সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। গরম ও আর্দ্রতাপূর্ণ আবহাওয়ায় শরীর ঠাণ্ডা রাখার জন্য এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার করা যেতে পারে। ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় ত্বককে অতিরিক্ত শুষ্ক হওয়া থেকে রক্ষা করতে মিস্ট হিউমিডিফায়ার (mist humidifier) ব্যবহার করা প্রয়োজন।
  • অ্যাকজিমা আক্রান্ত স্থান না আঁচড়ানো/চুলকানো: অ্যাকজিমার কারণে চুলকানি সৃষ্টি হয়। তবে অ্যাকজিমা আক্রান্ত স্থান চুলকালে সেখানে আরও বেশি চুলকানি হতে পারে। এছাড়া চুলকানোর কারণে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হলে ইনফেকশন হতে পারে। তাই চুলকানি প্রশমিত করতে আক্রান্ত স্থানে ঠাণ্ডা পানি প্রয়োগ, ময়েশ্চারাইজারের প্রয়োগ, গোসল করা ও ঔষধ গ্রহণ করা জরুরী।