খাবারে অ্যালার্জি (Food allergy)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

বিশেষ কিছু খাদ্য গ্রহণের কারণে শরীরের ইমিউন সিস্টেম (রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা) নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখালে, তাকে খাদ্যে অ্যালার্জি বলা হয়।

খাদ্যে অ্যালার্জি ফুড ইনটলারেন্স, ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও খাদ্যে বিষক্রিয়ার মতো সমস্যা থেকে ভিন্ন।

খাদ্যে বিদ্যমান প্রোটিন একটি অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী উপাদান। শরীরের ইমিউন সিস্টেম যখন ভুলবশত প্রোটিনকে ক্ষতিকারণ হিসেবে চিহ্নিত করে, তখন অ্যালার্জি দেখা দেয়। কিছু কিছু প্রোটিন বা প্রোটিনের অংশ সহজে হজম হয় না। পরিপাকক্রিয়ায় যেসব প্রোটিন হজম হয় না সেগুলি ইমিউনোগ্লোবিন ই [ Immunoglobulin E (IgE)] দ্বারা চিহ্নিত হয়। এর ফলে ইমিউন সিস্টেম ভুল করে বাহ্যিক কোনো আক্রমণকারী উপাদান হিসেবে এগুলিকে চিহ্নিত করে। এরপর ইমিউন সিস্টেম সেগুলিকে আক্রমণ করার জন্য শ্বেত রক্ত কণিকা প্রেরণ করে, এবং এ জন্যই শরীরে অ্যালার্জিজনিত প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এই প্রতিক্রিয়া বিভিন্ন মাত্রার হতে পারে। ডার্মাটাইটিস ( dermatitis), গ্যাসট্রোইনটেসটিনাল ডিসট্রেস ও রেসপিরেটোরি ডিসট্রেস (gastrointestinal and respiratory distress) খাবারে অ্যালার্জি সমস্যাগুলোর মধ্যে পড়ে। এছাড়াও এ কারণে সৃষ্ট বাইফ্যাসিক অ্যানাফাইল্যাক্সিস ( biphasic anaphylaxis) এবং ভ্যাসোডাইলেশনের (vasodilation) মতো অ্যানাফাইলেটিক রেসপন্স (anaphylactic responses) জীবনের জন্য  হুমকিস্বরূপ। এই সমস্যাগুলি দেখা দিলে জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ। প্রোটিনের কারণে কোনো ব্যক্তির অ্যালার্জি্র সমস্যা হলে তার সমস্যা সৃষ্টিকারী প্রোটিন এড়িয়ে চলা উচিৎ। কিছু ঔষধ গ্রহণের মাধ্যমে অ্যালার্জির কারণে সৃষ্ট প্রতিক্রিয়াগুলিকে প্রতিরোধ ও প্রশমিত করা সম্ভব। তবে অ্যালার্জি প্রতিকার করা সম্ভব নয়।

লক্ষণ

চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তিদের মধ্যে সাধারণত নিম্নলিখিত লক্ষনগুলো দেখতে পানঃ

চিকিৎসা

চিকিৎসকেরা এই রোগাক্রান্ত ব্যাক্তিদের নিম্নলিখিত ঔষধগুলো দিয়ে থাকেনঃ

adrenaline budesonide
cetirizine dihydrochloride desloratadine
ketotifen fumerate montelukast sodium
prednisolone triamcinolone
diphenhydramine

চিকিৎসকেরা এই রোগাক্রান্ত ব্যাক্তিদের নিম্নলিখিত টেস্টগুলো দিয়ে থাকেনঃ

সি-বি-সি (কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট) (CBC, Complete Blood Count)
ইওসিনোফিল (Eosinophil count)
আই-জি-ই (IgE)
প্যাঁচ টেষ্ট (Patch Testing)

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

সাধারণত নিম্নলিখিত বিষয়গুলি খাদ্যে অ্যালার্জির ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়:

  • বংশগত কারণ: আপনার পরিবারে/বংশে কারো অ্যাজমা, অ্যাকজিমা, হাইভস (hives) বা অ্যাল্যার্জি থাকলে আপনার খাদ্যে অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
  • পূর্বে খাদ্যে অ্যালার্জির থাকা: অনেক ক্ষেত্রে শিশুদের অ্যালার্জি হওয়ার পর সেরে গেলেও পরবর্তীতে তা আবার দেখা দিতে পারে।
  • ভিন্ন কোনো অ্যালার্জি থাকা: কোনো একটি খাদ্যে আপনার অ্যালার্জি থাকলে অন্য কোনো খাদ্যতেও আপনার অ্যালার্জি হতে পারে। একইভাবে আপনার শরীরে অন্য ধরনের অ্যালার্জিজনিত প্রতিক্রিয়া ( যেমন- হে ফিভার( hay fever)) দেখা দিলে, আপনার খাদ্যে অ্যালার্জি হওয়ার ঝুঁকি বুদ্ধি পায়।

বয়স: শিশুদের অ্যালার্জি বেশি হয়ে থাকে। বিশেষত ছোট বাচ্চা এবং নবজাতকদের অ্যালার্জি বেশি হয়। বয়সের সাথে সাথে পরিপাক ব্যবস্থা পরিণত হয়, এবং এ কারণে তা অ্যালার্জির সৃষ্টিকারী উপাদানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। শিশুরা দুধ, সয়াবিন, গম এবং ডিমের কারণে সৃষ্ট অ্যালার্জির থেকে নিরাময় লাভ করতে পারে। তবে কোনো ব্যক্তির তীব্র মাত্রার অ্যালার্জি হলে, তা জীবনব্যাপী থেকে যেতে পারে। এছাড়া বাদাম ও শেলফিসের (কাঁকড়া ও চিংড়ি) কারণে সৃষ্ট অ্যালার্জিও জীবনব্যাপী স্থায়ী হতে পারে।

  • অ্যাজমা: অ্যাজমা ও খ্যাদ্যে অ্যালার্জির সাধারণত একই সাথে দেখা দেয়। অ্যাজমা ও খ্যাদ্যে অ্যালার্জি একই সাথে হলে রোগ দুটির লক্ষণগুলি তীব্র আকার ধারন করে।           

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

 লিঙ্গ:  পুরুষ ও নারী উভয়ের এই রোগ নির্ণয় হওয়ার গড়পরতা সম্ভাবনা থাকে।

জাত: শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম। হিসপ্যানিক, কৃষ্ণাঙ্গ ও অন্যান্য জাতির মানুষের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার গড়পরতা সম্ভাবনা থাকে।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উ: প্রাথমিক চিকিৎসার পর আক্রান্ত ব্যক্তি কতোদিন পর আবার চিকিৎসকের কাছে আসবেন, তা তার অ্যালার্জির অবস্থার উপর নির্ভর করে। কিছু ব্যক্তিকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ৪-৬ সপ্তাহের মধ্যে চিকিৎসকের কাছে আসা লাগতে পারে, আবার অনেকের ১ বছরের মধ্যে পুনরায় চিকিৎসকের পরামর্শ নাও প্রয়োজন হতে পারে।

উ: আপনার শিশুর অ্যানাফাইল্যাক্সিস (anaphylaxis) [যে প্রতিক্রিয়া জীবনঘাতি] আছে কীনা, তা সহজেই বোঝা সম্ভব। এই রোগের কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ দেখা দেয়। আপনার শিশুর অ্যালার্জি আছে কিনা, পরীক্ষার মাধ্যমে তা নির্ণয় করা হয়। তবে অ্যালার্জি অনেক ক্ষেত্রে জটিল প্রকৃতির হতে পারে। সেক্ষেত্রে তা নির্ণয় করা একটু কঠিন ও সময়সাপেক্ষ হয়ে পড়ে। আপনি যদি সন্দেহ করেন যে আপনার শিশুর অ্যালার্জি আছে,  তাহলে এ ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। প্রয়োজনে আপনাকে অ্যালার্জির বিশেষজ্ঞের কাছেও যেতে হতে পারে।

 উ: ফুড ইনটলারেন্স ও খাদ্যে অ্যালার্জির মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা প্রায়ই কঠিন হয়ে পড়ে। ফুড ইনটলারেন্সের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট ধরনের খাদ্য গ্রহণের কারণে শরীরে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, তবে  এই প্রতিক্রিয়া শরীরের ইমিউন সিস্টেমের নয়, যেমন- ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স, ও খাদ্যের বিষক্রিয়া। সাধারণত একটি নির্দিস্ট খাদ্য পরিপাকের জন্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক উপাদান বা এনজাইমের অভাবের কারণে ফুড ইনটলারেন্স হয়ে থাকে।
খাদ্যে অ্যালার্জির ক্ষেত্রে খাদ্যে বিদ্যমান কোনো উপাদানের কারণে শরীরের ইমিউন সিস্টেমে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। অ্যালার্জির কারণে উক্ত উপাদানকে প্রশমিত করার জন্য শরীরে ইমিউনোগ্লোবিন ই অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, এবং এই কারণে ত্বকে ফুসকুড়ি হওয়ার মতো সাধারণ প্রতিক্রিয়া থেকে শুরু করে প্রাণঘাতি প্রতিক্রিয়াও দেখা দিতে পারে।


উ: আপনার শিশুকে কোনো নতুন ধরনের খাদ্য দেওয়ার আগে শিশু বিশেষজ্ঞ বা অ্যালার্জির বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

হেলথ টিপস্‌

 অ্যালার্জির সৃষ্টিকারী খাদ্য পরিহার করাই অ্যালার্জি প্রতিরোধ করার সবচেয়ে কার্যকর উপায়। আপনার অজ্ঞাতে কিছু কিছু খাবারে অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী উপাদান থাকতে পারে। বিশেষত রেস্টুরেন্টের খাবারে এ জাতীয় উপাদান থাকে।

আপনার খাদ্যে অ্যালার্জি থাকলে নিম্নোক্ত বিষয়গুলি অনুসরণ করুন:

খাদ্য সম্পর্কে সচেতন হোন। প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণের আগে তার মধ্যে বিদ্যমান উপাদান সম্পর্কে জেনে নিন।

চিকিৎসকের সাথে এপিনেফ্রিন (epinephrine) গ্রহণ করার ব্যাপারে আলোচনা করুন। আপনার শরীরে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া যদি তীব্র হয়, তাহলে আপনাকে এপিনেফ্রিন অটোইনজেকটর সাখে রাখতে হতে পারে।

রেস্টুরেন্ট/হোটেলে খাদ্য গ্রহণের ব্যাপারে সতর্ক হোন। আপনার খাদ্যে আল্যার্জি সৃষ্টিকারী উপাদান আছে কিনা, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হোন। যে পাত্রে আপনার খাদ্য প্রস্তুত করা হয়েছে, তাতে অ্যালার্জি সৃষ্টি করে এমন কোনো উপাদান ছিলো কিনা, তাও জেনে নিন।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তার

অধ্যাপক ডাঃ আর কে সাহা

মেডিসিন ( Medicine)

এমবিবিএস(ঢাকা), এফসিপিএস(মেডিসিন)

ডাঃমোঃ দেলোয়ার হোসেন(টিটো)

এন্ডোক্রাইনোলজি এন্ড মেটাবলিজম ( হরমোন) ( Endocrinology & Metabolism)

এমবিবিএস, এমসিপিএস(মেডিসিন), সিসিডি(বারডেম), এফআরএসএইচ(লন্ডন), এডভান্সড ট্রেনিং ইন নেফ্রোলজী

অধ্যাপক ডাঃ রেজাউল করিম খান

মেডিসিন ( Medicine), নিউরোলজি ( স্নায়ুতন্ত্র) ( Neurology)

এমবিবিএস , এফসিপিএস(মেডিসিন) , এমডি (নিউরোলজী) , এমআরসিপি (এডিন) , এফএসিপি(ইউএসএ)

অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আব্দুল কাদের আকন্দ

মেডিসিন ( Medicine), কার্ডিওলজি ( হার্ট) ( Cardiology)

এমবিবিএস, এফসিপিএস(মেডিসিন), এমডি(কার্ডিওলজী), এফএসিসি(আমেরিকা)

ডাঃ সহেলী আহমেদ সুইটি

মেডিসিন ( Medicine), নেফ্রোলজি ( কিডনি) ( Nephrology)

এমবিবিএস, এমডি(নেফ্রোলজি), এসিপিএস(আমেরিকা), এফআইএসএন(কানাডা)

ডাঃ মোঃ এনামুল হক

মেডিসিন ( Medicine)

এমবিবিএস(ডিএমসি) , এমআরসিপি(ইউকে)

ডাঃ মোঃ রফিকুল ইসলাম

মেডিসিন ( Medicine)

এমবিবিএস (ঢাকা), ডিটিসিডি (ঢাঃবিঃ), এফসিপিএস (আমেরিকা)

অধ্যাপক ডাঃ তোফায়েল আহমেদ

মেডিসিন ( Medicine), কার্ডিওলজি ( হার্ট) ( Cardiology)

এমবিবিএস , এফসিপিএস (বিডি) , এফসিপিএস (পাক), , এফএসিপি, , এফসিসিপি(আমেরিকা), এমআরসিপি (গ্লাসগো), , এফআরসিপি(গ্লাসগো, এডিন, আমেরিকা)