পেরিটোনাইটিস (Peritonitis)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

পেটের ভিতরের দিকের গায়ে/গাত্রে পেরিটোনিয়াম ( peritoneum) নামক এক ধরনের সিল্কের ন্যায় ঝিল্লির আবরণ থাকে, যা পেটের ভিতরের  অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলিকে ঢেকে রাখে। এই পেরিটোনিয়ামের ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসজনিত ইনফেকশনকে পেরিটোনাইটিস বলে। পেটে সৃষ্ট ফাটল বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণে এই রোগ হয়ে থাকে।

পেরিটোনাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির ইনফেকশন কমানোর জন্য দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন । অনেক ক্ষেত্রে এই রোগের সাথে সম্পর্কযুক্ত অন্যান্য শারীরিক সমস্যারও চিকিৎসা করা প্রয়োজন হতে পারে। সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক দ্বারা পেরিটোনাইটিসের চিকিৎসা করা হয়, তবে কিছু ক্ষেত্রে সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে। চিকিৎসা না করা হলে পেরিটোনাইটিসের কারণে সমগ্র শরীরে ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়ে জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।

কোনো ব্যক্তির পেরিটোনিয়াল ডায়লাইসিস ( peritoneal dialysis) করা হলে, পেরিটোনাইটিস প্রতিরোধ করার জন্য ডায়লাইসিস চলাকলীন এবং ডায়লাইসিসের পূ্র্বে ও পরে তার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা প্রয়োজন।

কারণ

পেরিটোনাইটিস দুই ধরনের। পেরিটোনিয়াল ক্যাভিটির (peritoneal cavity) তরল পদার্থের ইনফেকশনের কারণে স্পনটেনিয়াস পেরিটোনাইটিস ( Spontaneous peritonitis) হয়ে থাকে। লিভার বা কিডনি ফেইলিয়রের জন্য অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। তাছাড়া যেসব ব্যক্তির  পেরিটোনিয়াল ডায়লাইসিস করা হয়, তাদেরও এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

সেকেন্ডারি পেরিটোনাইটিস ( Secondary peritonitis) সাধারণত পরিপাকতন্ত্র থেকে ছড়িয়ে পড়া ইনফেকশনের কারণে সৃষ্টি হয়।

নিম্নে লিখিত বিষয়গুলির কারণে পেরিটোনাইটিস হতে পারে:

  • পেটের আঘাত বা ক্ষত।
  • অ্যাপেনডিক্স ফেটে গেলে।
  • পাকস্থলীর আলসার।
  • ফাটলযুক্ত কোলন (colon)
  • ডাইভার্টিকুলাইটিস( Diverticulitis) [যখন কোলনের গায়ে ক্ষুদ্র থলির ন্যায় অংশ দেখা দেয়, এবং সেগুলির ইনফ্লামেশন হয়]
  • প্যানক্রিয়াটাইটিস (Pancreatitis)[ প্যানক্রিয়াসের ইনফ্লামেশন]
  • লিভার সিরোসিস (liver Cirrhosis) বা লিভারের অন্যান্য রোগ
  • গলব্লাডার (gallbladder), অন্ত্র বা রক্তপ্রবাহের ইনফেকশন।
  • পেলভিক ইনফ্লামেটরি ডিজিজ (মহিলাদের প্রজননতন্ত্রের অঙ্গগুলির ইনফেকশন)
  • ক্রোন্স ডিজিজ (Crohn’s disease) [এক ধরনের ইনফ্লামেটরি বাওল ডিজিজ ( inflammatory bowel disease)]
  • বিভিন্ন চিকিৎসা-প্রক্রিয়া, যেমন- কিডনি ফেইলিয়র ও সার্জারির চিকিৎসা, বা ফিডিং টিউবের ব্যবহার।

লক্ষণ

এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসকেরা নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি চিহ্নিত করে থাকেন:

চিকিৎসা

]চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত ঔষধগুলি গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন:    

amoxycillin + clavulanic acid ampicillin
cefepime hydrochloride cefotaxime
ceftriaxone cefuroxime
ciprofloxacin clindamycin hydrochloride
gentamicin imipenem
meropenem trihydrate metronidazole
trimethoprim + sulfamethoxazole

চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত টেস্টগুলি করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন:

আর্টেরিয়াল ব্লাড গ্যাসেস (এ-বি-জি-এস) (Arterial blood gases (ABGs))
ইলেক্ট্রোলাইটস, সেরাম (Electrolytes, serum)
এইচ-বি% (হিমোগ্লোবিন) (HB% (Haemoglobin))
পেরিটোনিয়াল ফ্লুইড গ্রাম স্টেইন (Peritoneal fluid gram stain)
পেরিটোনিয়াল ফ্লুইড সাইটোলজি (Peritoneal fluid Cytology)

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

নিম্নলিখিত বিষয়গুলি পেরিটোনাইটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে:

  • পেরিটোনিয়াল ডায়লিসিস: যেসব ব্যক্তির পেরিটোনিয়াল ডায়লিসিস করা হয় তাদের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • অন্যান্য রোগ: সিরোসিস, অ্যাপেনডিসাইটিস ও পাকস্থলীর ক্যানসার ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের পেরিটোনাইটিস হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
  • পূর্বে পেরিটোনাইটিস হওয়া: একবার কোনো ব্যক্তি পেরিটোনাইটিসে আক্রান্ত হলে তিনি পুনরায় এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গ: পুরুষদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার গড়পরতা সম্ভাবনা থাকে। নারীদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

জাত: কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার সম্ভাবনা ২ গুণ কম। শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার গড়পরতা সম্ভাবনা থাকে। হিস্প্যানিক ও অন্যান্য জাতির মানুষের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তর: হ্যাঁ, হতে পারে। পেরিটোনাইটিস বলতে পেরিটোনিয়ামের ইনফ্লামেশনকে (প্রদাহ) বোঝায়। পেরিটোনিয়ামে ইনফেকশনের কারণে এই রোগ দেখা দেয়, তবে ছিদ্রযুক্ত অ্যাপেনডিক্স, ছিদ্রযুক্ত অন্ত্র, গলব্ল্যাডারের ( gall bladder) সমস্যা বা অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থেকে অন্য কোনো উপাদান ছিদ্র করে অ্যাবডোমিনাল ক্যাভিটিতে প্রবেশ করলেও এই ইনফেকশন হতে পারে।

উত্তর: মূত্রাশয়ের ইনফেকশনের অন্যতম কারণ হল ই-কোলাই ( E-coli) নামক ব্যাকটেরিয়া, যা মূত্রনালী থেকে কিডনিতে ছড়িয়ে পড়ে পায়লোনফ্রাইটিস( pyelonephritis) নামক কিডনির মারাত্মক ইনফ্লামেশন সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে কিডনিতে এক ধরনের সংক্রামক তরল জমে। পরবর্তীতে ব্যাকটেরিয়া যদি রক্তে প্রবেশ করে তাহলে রক্ত দূষিত হতে পারে। ব্যাকটেরিয়া যদি কিডনি থেকে পেটে প্রবেশ করে তাহলে পেরিটোনাইটিস দেখা দেয়।

হেলথ টিপস্‌

আপনার যদি পূর্বে স্পনটেনিয়াস পেরিটোনাইটিস হয়ে থাকে, বা সিরোসিসের মতো অন্য কোনো শারীরিক সমস্যার কারণে যদি আপনার পেরিটোনিয়ামে তরল (পেরিটোনিয়াল ফ্লুইড) জমা হয়, তাহলে পেরিটোনাইটিস প্রতিরোধ করার জন্য আপনাকে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করতে হতে পারে।

পেরিটোনিয়াল ডায়লিসিসের জন্য পেরিটোনাইটিস হয়ে থাকলে তা ক্যাথেটারের চারপাশের জীবাণুর জন্য হয়ে থাকে। যদি আপনার পেরিটোনিয়াল ডায়লিসিস করা হয়, তাহলে পেরিটোনাইটিসের ঝুঁকি কমানোর জন্য নিস্নে লিখিত বিষয়গুলি অনুসরণ করুন:

  • হাত পরিষ্কার করুন। ক্যাথেটার স্পর্শ করার আগে নখ এবং আঙুলের মাঝখানের অংশও পরিষ্কার রাখুন।
  • ক্যাথেটারের চারপাশের ত্বক প্রতিদিন অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে পরিষ্কার করুন।
  • সঠিকভাবে পেরিটোনিয়াল ডায়লিসিস ক্যাথেটারের যত্ন নেওয়ার জন্য ‘ডায়লিসিস কেয়ার টিমের’ পরামর্শ নিন।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তার

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অধ্যাপক ডাঃ শেখ মোঃ বাহার হোসেন (অবঃ)

গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি ( খাদ্যনালী, পরিপাকতন্ত্র) ( Gastroenterology), মেডিসিন ( Medicine)

এমবিবিএস, এফসিপিএস(মেডিসিন), এফআরসিপি(এডিন), এফআরসিপি(গ্লাসগো), এফএসিপি(আমেরিকা), এফ গ্রাষ্ট্রো(সাংহাই)

ডঃ এস এম রোকনুজ্জামান

মেডিসিন ( Medicine), গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি ( খাদ্যনালী, পরিপাকতন্ত্র) ( Gastroenterology), হেপাটোলজি ( লিভার) ( Hepatology)

এমবিবিএস, এফসিপিএস(মেডিসিন), এমডি(গ্যাস্ট্রো এন্টারলজি এন্ড হেপাটোলজি)

ডাঃ মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন

গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি ( খাদ্যনালী, পরিপাকতন্ত্র) ( Gastroenterology)

এমবিবিএস(ঢাকা), এমডি(গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজী)

ডাঃ মোঃ নাজমুল হক

গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি ( খাদ্যনালী, পরিপাকতন্ত্র) ( Gastroenterology)

এমবিবিএস, এমডি(গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজী)

অধ্যাপক ডাঃ মোঃ মোতালেব চৌধুরী

গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি ( খাদ্যনালী, পরিপাকতন্ত্র) ( Gastroenterology)

এমবিবিএস(ঢাকা), এমসিপিএস(মেডিসিন), এমডি(গ্যাষ্ট্রোএন্টারোলজী)

ডাঃ রকিবুল ইসলাম

মেডিসিন ( Medicine), গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি ( খাদ্যনালী, পরিপাকতন্ত্র) ( Gastroenterology)

এম বি বি এস, , এম ডি(গ্যাসট্রোলজি),, এফ সি পি এস (মেডিসিন)

ডাঃ মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান

গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি ( খাদ্যনালী, পরিপাকতন্ত্র) ( Gastroenterology)

এমবিবিএস(ডিএমসি), এফসিপিএস(মেডিসিন), এমএসিপি(ইউএসএ), এমএসিজি(ইউএসএ), এমডি(গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজী)

ডাঃ হাবিব আহমেদ

গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি ( খাদ্যনালী, পরিপাকতন্ত্র) ( Gastroenterology)

এমবিবিএস, বিসিএস(স্বাস্থ্য), এমডি (গ্যস্ট্রোএন্টারোলজি), বারডেম