শ্রবণ ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া বা কানে কম শোনা (Diminished hearing)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

লক্ষণটি বধিরতা, আংশিক শ্রবণশক্তি হ্রাস, শুনতে সমস্যা হওয়া ও হায়পোয়াকিউসিস (Hypoacusis) নামেও পরিচিত।

সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে শ্রবণশক্তি হ্রাস পাওয়াকে কানে কম শোনা বলা হয়। বিভিন্ন কারণে একজন ব্যক্তি কানে কম শুনতে পারেন, যেমন- বয়স বৃদ্ধি, অতিরিক্ত আওয়াজ, অসুস্থতা, রাসায়নিক দ্রব্যের প্রভাব ও শারীরিক আঘাত। পরীক্ষার মাধ্যমে শ্রবণক্ষমতা হ্রাসের তীব্রতা নির্ণয় করা যায়। শ্রবণক্ষমতা হ্রাসের মাত্রাকে সাধারণত মৃদু, মাঝারী, মাঝারী তীব্র ও তীব্র- এই চারভাগে ভাগ করা হয়। সাধারণত কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করে কানে কম শোনার সমস্যা প্রতিরোধ করা যায়, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই সমস্যার প্রতিকার বা প্রতিরোধ সম্ভব নয়। ইদানীং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে শ্রবণশক্তি বৃদ্ধি করা হয়। তবে এই প্রযুক্তিগুলির কার্যকারিতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

কারণ

বিভিন্ন কারণে এই লক্ষণ দেখা যেতে পারেঃ যেমন-

টনসিল ইনফেকশন (Tonsillitis) কান পাকা/কানের প্রদাহ (Otitis media)
অ্যাকিউট অটাইটিস মিডিয়া (Acute otitis media) প্রেসবাইএকিউসিস (Presbyacusis)
অটাইটিস এক্সটারনা (Otitis externa (swimmer's ear)) সিউডোটিউমার সেরেব্রি (Pseudotumor cerebri)
টারনার সিন্ড্রোম (Turner syndrome) কোলেস্টিয়াটোমা (Cholesteatoma)
কন্ডাক্টিভ হেয়ারিং লস (Conductive hearing loss) ইনজুরি টু দি ফেস (Injury to the face)
ইয়ার ড্রাম ড্যামেজ (Ear drum damage) এপিডুরাল হেমারেজ (Epidural hemorrhage)
ইউস্টেশিয়ান টিউব ডিজফাংশন (Eustachian tube dysfunction (ear disorder)) কানে বাহ্যিক বস্তু (Foreign body in the ear)
ল্যাবিরিন্থাইটিস (Labyrinthitis) টেস্টিকুলার ক্যান্সার (Testicular cancer)
মেনিয়ার ডিজিজ (Meniere disease) মেনিনজিওমা (Meningioma)
অ্যাড্রেনাল ক্যান্সার (Adrenal cancer) ম্যাস্টোয়ডাইটিস (Mastoiditis)
বিনাইন প্যারোক্সিজমাল পজিশনাল ভার্টিগো (বি-পি-পি-ভি) (Benign paroxysmal positional vertigo (BPPV)) অটোস্ক্লেরোসিস (Otosclerosis)
অ্যাসপারজিলোসিস (Aspergillosis) ফ্র্যাকচার অফ দি স্কাল (Fracture of the skull)
কঞ্জেনিটাল ম্যালফরমেশন সিন্ড্রোম (Congenital malformation syndrome)

সংশ্লিষ্ট লক্ষণসমূহ

এই লক্ষণের সাথে অন্যান্য যেসকল লক্ষণ দেখা যেতে পারে সেগুলো হলোঃ

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

যেসব বিষয় কানে কম শোনার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে সেগুলি হলো-

·       বয়স বৃদ্ধি: দীর্ঘ সময় ধরে শব্দ শ্রবণের ফলে মধ্যকর্ণের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

·       বংশ: আপনার জিনের গঠনের জন্য শব্দ শোনা ও বয়স বৃদ্ধির কারণে আপনার বধিরতা হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেতে পারে।

·       কর্মস্থলে শব্দ: কোনো ব্যক্তির কর্মস্থলে মাত্রাধিক শব্দ উৎপন্ন হলে তার কানে কম শোনার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। এ ধরনের কিছু কাজ হলো চাষাবাদ, নির্মা্ণ কাজ ও ফ্যাক্টরির কাজ। এসব স্থানের শব্দের ফলে মধ্যকর্ণের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

·       অন্যান্য শব্দ: গোলাবারুদ ও জেট ইঞ্জিনের শব্দের কারণে অস্থায়ী বা স্থায়ীভাবে বধিরতা সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া মোটরসাইকেলের শব্দ ও উচ্চস্বরে বাজানো সঙ্গীতের কারণেও এই সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে।

·       ঔষধ: অ্যান্টিবায়োটিক জেন্টামাইসিন এবং কিছু কেমোথেরাপির ঔষধ সেবনের ফলে মধ্যকর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এছাড়া হাই ডোজের অ্যাসপিরিন, ব্যথানাশক, ম্যালেরিয়ারোধী ঔষধ এবং লুপ ডাই-ইউরেটিক (loop diuretics  গ্রহণের কারণেও শ্রবণক্ষমতা প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

·       কিছু বিশেষ রোগ: মেনিনজাইটিসের মতো যেসব রোগের কারণে অত্যাধিক জ্বর হয়, সেগুলির কারণে ককলিয়া (cochlea) ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গ: পুরুষদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা থাকে। নারীদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

জাত: কৃষ্ণাঙ্গ ও হিস্প্যানিকদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম। শ্বেতাঙ্গ ও অন্যান্য জাতির মানুষের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা থাকে।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তরঃ এর কারণ কানে তরল পদার্থ জমে থাকা। কানে বাতাস প্রবেশ করার পথের উপরের অংশে ইনফেকশন বা ফ্লুয়ের মতো লক্ষণ দেখা দেওয়ার পর মধ্যকর্ণে এক জাতীয় তরল পদার্থ জমে থাকতে পারে। এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ। এই তরল পদার্থ স্বাভাবিকভাবে কমতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে, এবং এটি জমার কারণে মধ্যকর্ণে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

উত্তরঃ পরীক্ষা করার বিষয়টি শিশুর অবস্থার উপর নির্ভর করছে। তবে সাধারণত বড়ো হাসপাতালগুলিতে জন্মের সময় শিশুদের শ্রবণশক্তির পরীক্ষা করা হয়।

হেলথ টিপস্‌

  • কর্মস্থলে কানের সুরক্ষা: বিশেষভাবে তৈরি ইয়ারমাফ (earmuff) তীব্র মাত্রার শব্দকে গ্রহণযোগ্য মাত্রায় এনে আপনার কানকে সুরক্ষা প্রদান করতে পারে। এছাড়া প্লাস্টিক বা রাবারের তৈরি ইয়ারপ্লাগও আপনার কানকে উচ্চ মাত্রার শব্দ থেকে রক্ষা করবে।
  • কানের পরীক্ষা: আপনার কর্মস্থল যদি উচ্চ মাত্রার শব্দযুক্ত কোনো স্থানে হয়, তাহলে আপনার নিয়মিত কান পরীক্ষা করা উচিৎ। আপনার কানে কোনো সমস্যা থাকলে পরীক্ষায় তা প্রাথমিক অবস্থা ধরা পড়বে। কানের সমস্যা সম্পর্কে অবগত হলে আপনি  প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে পারবেন।
  • তীব্র শব্দ এড়িয়ে চলুন: কনসার্টে দীর্ঘ সময় থাকলে আপনার শ্রবণ ক্ষমতা প্রভাবিত হতে পারে। কানে সুরক্ষা প্রদানকারী কোনো দ্রব্য ব্যবহার করে, বা শব্দ শোনার সময় মাঝামাঝে বিরতি দিয়ে আপনি উচ্চ মাত্রার শব্দ থেকে সুরক্ষা পেতে পারেন। এছাড়া কম ভলিউমে গান শোনাও আপনার কানের জন্য উপকারী।