আকস্মিকভাবে যৌনাকাঙ্ক্ষা ও যৌনক্রিয়া মাত্রাধিক বেড়ে গেলে তাকে
হাইপারসেক্সুয়ালিটি (Hyper sexuality) বলে। শারীরিক বা মানসিক অসুস্থতা,
অ্যালকোহল ও মাদকের ব্যবহার এবং উত্তেজক ঔষধ ব্যবহারের কারণে
হাইপারসেক্সুয়ালিটি দেখা দিতে পারে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ সমস্যার সঠিক
কারণ নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। এ অবস্থায় যৌনসঙ্গমের ইচ্ছা স্বাভাবিকের
তুলনায় বেড়ে যায় এবং যার ফলে পরর্বতীতে ব্যক্তির মধ্যে মাত্রাধিক
হস্তমৈথুনের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। হাইপারসেক্সুয়ালিটি ব্যখ্যার জন্য
কয়েকটি তত্ত্বীয় বিশ্লেষণ বা theoretical model রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে
পরিচিত বিশ্লেষণটি হলো সেক্সুয়াল অ্যাডিকশন অ্যাপ্রোচ (sexual addiction
approach)। তবে এই অ্যাপ্রোচের গ্রহণযোগ্যতার ব্যাপারে সেক্সোলোজিস্টরা
কোনো সিন্ধান্তে পৌঁছাননি। এছাড়াও হাইপারসেক্সুয়ালিটি নিয়ে আরো কয়েকটি
ব্যাখ্যা রয়েছে, যেমনঃ কম্পালসিভ ও ইম্পালসিভ বিহ্যাভিওরাল মডেলস (compulsive and impulsive behavioral models)।
কারণ
সাধারণত মানসিক অসুস্থতার কারণে মাত্রাধিক হস্তমৈথুনের প্রবণতা দেখা
দেয়। তবে নিকোটিন ও মাদকের ব্যবহারের কারণে এ সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। যৌন
উত্তেজনার ফলে আমাদের দেহে ও মস্তিষ্কে বিভিন্ন প্রকারের হরমোন নিঃসৃত হয়।
যৌন উত্তেজনা বৃদ্ধির সাথে সাথে এবং অর্গাজমের সময় হরমোন নিঃসরণের পরিমাণ
বেড়ে যায় ও ব্যক্তি চরম আনন্দ ও স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করে। একইসাথে ব্যক্তি
নিজের শারীরিক ও মানসিক উভয় সমস্যা থেকে সাময়িকের জন্য মুক্তি পায়। যার ফলে
দৈনন্দিন দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ, এমনকি শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা থেকে
সাময়িকভাবে মুক্তিলাভের জন্য মাত্রাধিক হস্তমৈথুনের প্রবণতা গড়ে ওঠে। তবে
এই যৌনক্রিয়া অভ্যাসে পরিণত হলে তা যৌনবিকৃতিতে পরিণত হয় এবং সহজে তা
পরিহার করা সম্ভব নয়।
লিঙ্গভেদে হস্তমৈথুনের মাত্রা ও ইচ্ছা ভিন্ন
হতে পারে। তবে মহিলাদের মধ্যে এ সমস্যা কম দেখা দেয়। দেখা গেছে,
পর্নোগ্রাফির প্রতি আসক্ত হয়ে পড়লে মহিলাদের মধ্যে মাত্রাধিক হস্তমৈথুনের
প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। আবার সেক্সুয়াল অ্যারাউজাল ডিজঅর্ডার (sexual
arousal disorder) বা পি-এস-এ-ডি (PSAD) তে আক্রান্ত হলে মহিলাদের মধ্যে এ
লক্ষণ দেখা দেয়।
সংশ্লিষ্ট লক্ষণসমূহ
এই লক্ষণের সাথে অন্যান্য যেসকল লক্ষণ দেখা যেতে পারে সেগুলো হলো:
মাত্রাধিক হস্তমৈথুনের সমস্যা কম্পালসিভ সেক্সুয়াল বিহ্যাভিয়ার এর
অন্তর্গত। যেসকল কারণে এ লক্ষণ দেখা দেওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় যাগুলো হলোঃ
মাদক ও অ্যালকোহলের ব্যবহার।
মানসিক অসুস্থতা যেমনঃ বিষন্নতা, বাইপোলার ডিজঅর্ডার ও মুড ডিজঅর্ডার থাকলে।
জুয়াখেলার প্রতি আসক্ত হলে।
শারীরিক বা যৌন নির্যাতনের শিকার হলে।
যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে
লিঙ্গ: পুরুষদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ২ গুণ বেশি। মহিলাদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ৩৫ গুণ কম।
জাতি: কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে।
হিস্প্যানিকদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ২ গুণ বেশি।
শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম। অন্যান্য
জাতির মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ৩ গুণ কম।
হেলথ টিপস্
কম্পালসিভ সেক্সুয়াল বিহ্যাভিয়ার এর সঠিক কারন এখনও অজানা। তাই এই
সমস্যা প্রতিরোধযোগ্য নয়। তবে নির্দিষ্ট কিছু পন্থা অবলম্বন করে এ সমস্যা
নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। যেমনঃ
যৌন আচরণ বা যৌনসম্পর্কীয় কোনো সমস্যা দেখা দেওয়ার সাথে সাথে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে।
মানসিক অসুস্থতার ক্ষেত্রে যথাসময়ে চিকিৎসা করাতে হবে।
মাদক ও অ্যাকোহলের ব্যবহার পরিহার করতে হবে।
এমন পরিস্থিতি বা অবস্থা এড়িয়ে চলতে হবে যে অবস্থায় ব্যক্তি ঝুঁকিপূর্ণ যৌন কর্মকান্ডের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে।