সারভাইকাল ক্যান্সার (Cervical cancer)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

জরায়ুর সারভিক্সের (cervix) কোষ থেকে উৎপন্ন ক্ষতিকারক টিউমারকে সারভাইকাল ক্যান্সার বলে। যোনিতে রক্তপাত হওয়া এই রোগের প্রধান লক্ষণ। তবে কিছু আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে ক্যান্সার চূড়ান্ত পর্যায়ে না গেলে কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষণ দেখা দেয় না। প্রাথমিক অবস্থায় সারভাইকাল ক্যান্সারের চিকিৎসা সার্জারির ( আক্রান্ত স্থান অপসারণ) মাধ্যমে করা হয়ে থাকে। তবে ক্যান্সার তীব্র আকার ধারণ করলে  কেমোথেরাপি এবং/অথবা রেডিওথেরাপির  মাধ্যমে তার চিকিৎসা করা হয়।

কারণ

স্বাভাবিক/সুস্থ কোষের জিনগত পরিবর্তন হওয়ার (মিউটেশন, mutation ) কারণে তা অস্বাভাবিক রূপ ধারণ করলে সারভাইকাল ক্যান্সারের সূত্রপাত হয়। স্বাভাবিক কোষ একটি নির্দিষ্ট হারে বর্ধিত হয় এবং সংখ্যাবৃদ্ধি করে। এই কোষের বিনাশ/মৃত্যুও একটি  নির্দিষ্ট সময়ে ঘটে। কিন্তু ক্যান্সার কোষের বিকাশ ও সংখ্যাবৃদ্ধি হয়  অনিয়ন্ত্রিতভাবে, এবং এই কোষ ধ্বংস হয় না । অস্বাভাবিক এই কোষগুলি সঞ্চিত হয়ে টিউমারের সৃষ্টি করে থাকে। ক্যান্সার কোষগুলি আশেপাশের টিস্যুকে আক্রান্ত করে, এমনকি টিউমার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। সারভাইকাল ক্যান্সারের মূল কারণ সম্বন্ধে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি, তবে রোগটি সৃষ্টির ক্ষেত্রে এইচ-পি-ভি (HPV) –এর একটি ভূমিকা আছে। এইচ-পি-ভি ভাইরাসের সংক্রমণ প্রায়ই দেখা যায়। তবে এই ভাইরাসে আক্রান্ত বেশিরভাগ নারীদের সারভাইকাল ক্যান্সার হয় না। অর্থাৎ, পরিবেশ ও জীবনযাত্রা্র ধরনও এই রোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে।

লক্ষণ

এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসকেরা নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি চিহ্নিত করে থাকেন:

চিকিৎসা

চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত ঔষধগুলি গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন: 

bevacizumab cisplatin
ifosfamide paclitaxel

চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত টেস্টগুলি করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন: 

কিডনী ফাংশন টেস্ট (Kidney function test)
লিভার ফাংশন টেস্ট (Liver function tests)
সি-বি-সি (কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট) (CBC, Complete Blood Count)
এইচ-পি-ভি ডি-এন-এ ডিটেকশন (HPV DNA detection)
প্যাপ'স স্মেয়ার ফর সাইটোলজি (Pap's smear for cytology)
বায়োপসি (Biopsy)
সিটি স্ক্যান অ্যাবডোমেন (CT scan abdomen)
ম্যাগনেটিক রেজোনেন্স ইমেজিং (এম-আর-আই) (Magnetic resonance imaging (MRI))
এক্স-রে, চেস্ট পি-এ ভিউ (X-ray, Chest P/A view)

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

নিন্মলিখিত বিষয়গুলি সারভাইকাল ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে:

  • একাধিক যৌনসঙ্গী: কোনো ব্যক্তির একাধিক যৌনসঙ্গী থাকলে তার এইচ-পি-ভি দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
  • অল্প বয়সে যৌনতায় লিপ্ত হওয়া: অল্প বয়সে যৌনক্রিয়ায় লিপ্ত হলে এইচ-পি-ভি সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  • যৌনবাহিত ইনফেকশন: ক্ল্যামাইডিয়া, গনোরিয়া, সিফিলিস এবং এইচ-আই-ভি/এইডস মতো রোগে আক্রান্ত হলে এইচ-পি-ভি সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে।
  • দুর্বল ইমিউন সিস্টেম (রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা): কোনো রোগের কারণে শরীরের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে গেলে এবং এইচ-পি-ভিতে আক্রান্ত হলে একজন ব্যক্তির সারভাইকাল ক্যান্সার হতে পারে।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গ: নারীদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা থাকে।

জাত: শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম। হিস্প্যানিক, কৃষ্ণাঙ্গ এবং অন্যান্য জাতির মানুষের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার গড়পরতা সম্ভাবনা থাকে।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তরঃ উন্নয়নশীল দেশগুলিতে ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর সংখ্যার তালিকায় সারভাইকাল ক্যান্সারের কারণে মৃত্যুর সংখ্যা দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। আফ্রিকা এবং মধ্য অ্যামেরিকার ক্ষেত্রে এই অবস্থান প্রথম। প্রতিরোধ, পরীক্ষা, প্রাথমিক অবস্থায় রোগটি নির্ণয় করা ও চিকিৎসার মাধ্যমে রোগটির দ্বারা সৃস্ট ক্ষতির পরিমাণ কমানো যেতে পারে।

উত্তরঃ সাধারণত সারভাইকাল ক্যান্সারের ৪টি পর্যায় থাকে। রোগটি যতো বেশি পর্যায় অতিক্রম করবে, ততোই সেটির নিরাময়ের সম্ভাবনা কমে যাবে। সারভাইকাল ক্যান্সারের চিকিৎসা স্বাধারনত এই রোগটি কোন পর্যায়ে আছে, তার উপর নির্ভর করে। 

উত্তর : হ্যাঁ, সারভাইকাল ক্যান্সারের কারণে মৃত্যু হতে পারে। উন্নয়নশীল দেশগুলিতে বহু সংখ্যক নারী এই রোগটি সম্পর্কে অবগত নয়। এই কারণে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেকেই মৃত্যুবরণ করে।

হেলথ টিপস্‌

নিম্নে লিখিত বিষয়গুলি অনুসরণ করে সারভাইকাল ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো যেতে পারে:

  • এইচ-পি-ভি এর টিকা: ৯ থেকে ২৬ বছর বয়স্ক নারীদের জন্য এইচ-পি-ভি এর টিকা রয়েছে। নারীরা যৌন সংসর্গ শুরুর পূর্বে এই টিকা গ্রহণ করলে টিকাটি বেশি কার্যকর হয়।
  • প্যাপ টেস্ট: প্যাপ টেস্টের মাধ্যমে সারভিক্সের ক্যানসারের পূর্ববর্তী অবস্থা নির্ণয় করা যায়। এই অবস্থায় ক্যানসার নির্ণিত হলে পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসার মাধ্যমে তা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
  • নিরাপদ যৌনতা: যৌন মিলনের সময় কনডম ব্যবহার করলে, এবং একাধিক ব্যক্তির সাথে যৌনসম্পর্ক না রাখলে এই রোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
  • ধূমপান ত্যাগ করা।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তার

ডাঃ সানজিদা আহমেদ

গাইনি ও অবসটেট্রিক্স ( Obstetrics & Gynaecology)

এমসিপিএস(ঢাকা), বিসিএস(স্বাস্থ্য), এফসিপিএস(অব্‌স এন্ড গাইনী)

অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডাঃ লিজা চৌধুরী

গাইনি ও অবসটেট্রিক্স ( Obstetrics & Gynaecology)

এমবিবিএস , এমসিপিএস , ডিজিও, এফসিপিএস(গাইনী)

ডাঃ শামসুন নাহার

অঙ্কোলজি ( ক্যান্সার) ( Oncology)

এমবিবিএস, এফসিপিএস(অনকোলজি)

অধ্যাপক ডাঃ ফেরদৌসি বেগম(ফ্লোরা)

গাইনি ও অবসটেট্রিক্স ( Obstetrics & Gynaecology)

এমবিবিএস (ডিএমসি) , এফসিপিএস (গাইনী এন্ড অব্‌স) , ফেলো ওয়াল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন

ডাঃ সাদিয়া মাহফিজা খানম

গাইনি ও অবসটেট্রিক্স ( Obstetrics & Gynaecology)

এমবিবিএস(ঢাকা), বিসিএস(স্বাস্থ্য), এফসিপিএস(পার্ট-২)

অধ্যাপক ডাঃ নাসিমা আখতার

গাইনি ও অবসটেট্রিক্স ( Obstetrics & Gynaecology)

এমবিবিএস, পিএইচডি(জাপান), বিএমডিসি

ডাঃ রুনা লায়লা

গাইনি ও অবসটেট্রিক্স ( Obstetrics & Gynaecology)

এম বি বি এস, এফ সি পি এস, এম সি পি এস

অধ্যাপক ডাঃ মুন্নুজান বেগম

গাইনি ও অবসটেট্রিক্স ( Obstetrics & Gynaecology)

এমবিবিএস(ঢাকা), , এফসিপিএস(গাইনী এন্ড অব্‌স)