জন্ডিস (Jaundice)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

বিলিরুবিনের (bilirubin) মাত্রা বৃদ্ধির কারণে জন্ডিস হয়ে থাকে। বিলিরুবিন হলো হিমোগ্লোবিনে (hemoglobin) বিদ্যমান এক ধরনের উপাদান, যা রক্তকোষে অক্সিজেন পরিবহন করে। জন্ডিসের কারণে ত্বক ও চোখের সাদা অংশ হলুদ বর্ণ ধারণ করে।

পুরানো লোহিত রক্ত কণিকা ভেঙে (ধ্বংস) গেলে শরীরে নতুন লোহিত রক্ত কণিকা সৃষ্টি হয়। পুরানো লোহিত রক্ত কণিকাগুলি লিভার দ্বারা নিষ্কাশিত হয়ে থাকে। যদি লিভার সঠিকভাবে এই ক্রিয়াটি সম্পাদন না করতে পারে, তাহলে বিলুরুবিন জমতে শুরু করে এবং ত্বক হলুদ বর্ণ ধারণ করে। জন্মের পর প্রথম সপ্তাহে অনেক সুস্থ শিশুর জন্ডিস হতে পারে। সাধারণত এই জন্ডিস এমনিতেই কমে যায়। তবে কিছু শারীরিক সমস্যার লক্ষণ হিসেবে এটি যে কোনো বয়সে দেখা দিতে পারে।

কারণ

বিভিন্ন কারণে এই লক্ষণ দেখা যেতে পারে, যেমন:

সংশ্লিষ্ট লক্ষণসমূহ

এই লক্ষণের সাথে অন্যান্য যেসকল লক্ষণ দেখা যেতে পারে সেগুলো হলো:

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

নিম্নলিখিত বিষয়গুলি জন্ডিস হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে:

  • অপরিণত অবস্থায় জন্মগ্রহণ: মায়ের গর্ভে ৩৮ সপ্তাহ থাকার পূর্বে জন্মগ্রহণ করা শিশুদের শরীরে বিলিরুবিন দ্রুত নিষ্কাশিত হতে পারে না। এছাড়া এই শিশুরা কম পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করে এবং কম সংখ্যক  বার মলত্যাগ করে। এই কারণে মলের সাথে কম পরিমাণে বিলিরুবিন  নির্গত হয়।
  • জন্মগ্রহণের সময় আঘাত: ডেলিভারির সময় কোনো নবজাতক আঘাতপ্রাপ্ত হলে তার রক্তে বেশি পরিমাণ লোহিত কণিকার ভাঙন ঘটে, ফলে বিলিরুবিনের মাত্রাও বেড়ে যায়।
  • রক্তের ধরন: কোনো শিশুর রক্তের ধরন যদি তার মায়ের রক্তের ধরনের চেয়ে ভিন্নতর হয়, তাহলে প্লাসেন্টার (placenta) মাধ্যমে তার শরীরে অ্যান্টিবডি প্রবেশ করার সম্ভাবনা থাকে। এই কারণে তার রক্তকণিকা দ্রুত ভেঙে যেতে পারে।
  • স্তন্যপান: স্তন্যপানকারী শিশুরা মায়ের দুধ থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টি না পেলে তাদের জন্ডিস হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এছাড়া পানিশূন্যতা ও কম পরিমাণ ক্যালরি গ্রহণও জন্ডিস  হওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। তবে স্তন্যপানের নানা উপকারের কারণে চিকিৎসকেরা শিশুদেরকে স্তন্যপান করানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাই শিশু পর্যাপ্ত পরিমাণে দুধ পান করছে কীনা, সেদিকে খেয়াল রাখা উচিৎ।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গ: পুরুষদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা থাকে। মহিলাদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

জাত:  হিস্প্যানিকদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা থাকে। শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম। অন্যান্য জাতির মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ২ গুণ বেশি।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তর: এ ক্ষেত্রে অন্য কোনো সমস্যা না থাকলে স্তন্যপান করানো বন্ধ করার প্রয়োজন নেই। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্তন্যপান বন্ধ করা হলে শিশুর জন্ডিস কমে যায় কীনা, অর্থাৎ সত্যিই তার জন্ডিস হয়েছে কীনা, তা বোঝার জন্য চিকিৎসক স্তন্যপান বন্ধ করার পরামর্শ দিতে পারেন। স্প্লিট বিলিরুবিন টেস্ট (split bilirubin test) এবং মল-মূত্রের রঙের পরীক্ষার ফলাফল স্বাভাবিক হলে স্তন্যপান বন্ধ করার প্রয়োজন হয় না।

হেলথ টিপস্‌

নবজাতকদের জন্ডিস প্রতিরোধ করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো তাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়ানো। জন্মের পর পর শিশুদের প্রতিদিন ৮ থেকে ১২ বার খাওয়ানো উচিৎ।