মেনিনজাইটিস (Meningitis)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

মেনিনজাইটিস হলো মস্তিষ্ক এবং স্পাইনাল কর্ডের পাশে অবস্থিত ঝিল্লীর (meninges) প্রদাহজনিত ব্যাধি। মেনিনজাইটিসের কারণে এই অংশের স্ফীতি ঘটলে এর সাথে জড়িত কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ প্রকাশ পায়, যেমন- মাথা ব্যথা, জ্বর এবং ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া। ইনফেকশনের কারণগুলির উপর ভিত্তি করে এই রোগটি পুরোপুরি ভালো হতে দুই সপ্তাহ সময় লাগে। কিছু ক্ষেত্রে রোগটি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে । তখন এর জন্য জরুরী অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। যদি আপনি মনে করেন আপনি নিজে অথবা আপনার পরিবারের কেউ এই রোগে আক্রান্ত তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। দ্রুত চিকিৎসার মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়াজনিত মেনিনজাইটিসের কারণে সৃষ্ট জটিলতা প্রতিরোধ করা সম্ভব।

কারণ

বিশেষ এক প্রকারের ব্যাকটেরিয়ার কারণে মেনিনজাইটিস হয়। এই ব্যাধির অন্যান্য কারণগুলি হল-

  • স্ট্রেপ্টোকক্কাস নিউমোনিয়া (নিউমোকক্কাস): এক ধরনের ভ্যাকসিন বা টিকার মাধ্যমে এই ব্যাকটেরিয়াজনিত ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
  • নাইসেরিয়া মেনিনজাইটিডিস (মেনিনগোকক্কাস): ব্যাকটেরিয়াজনিত মেনিনজাইটিসের অন্য একটি কারণ হল  মেনিনজাইটিডিস (মেনিনগোকোকাস)। শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে এই ব্যাকটেরিয়া দেহে প্রবেশ করে। এই ধরনের ব্যাকটেরিয়া অতি মাত্রায় সংক্রমিত হয়। সাধারণত তরুণ এবং প্রাপ্তবয়স্কদের এই ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হতে দেখা যায়। এই ধরনের ব্যাকটেরিয়াগুলি কলেজের ছাত্রাবাসে, স্কুলের বোর্ডিং ও সামরিক ঘাঁটিতে অত্যাধিক মাত্রায় দেখা দেয়।
  • হেমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা (হেমোফিলাস): হেমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা বি-এর কারণে শিশুদের ব্যাকটেরিয়াজনিত মেনিনজাইটিস হয়।
  • লিসটেরিয়া মোনোসাইটোজন্স (লিসটেরিয়া): এই ব্যাকটেরিয়াগুলি নরম চিজ, হট ডগ এবং  মাংসের মধ্যে দেখা যায়। স্বাস্থ্যবান ব্যক্তিদের শরীরে এই ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ সহজে ঘটে না। গর্ভবতী মহিলা, সদ্যজাত শিশু, বৃদ্ধ ব্যক্তি এবং যেসব ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তারা এই ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সহজেই আক্রান্ত হয়। এই ব্যাকটেরিয়া গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভে পৌঁছে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্ট করতে পারে, যেমন- মৃত শিশুর জন্ম দেওয়া অথবা শিশু জন্মের পরে খুব অল্প কিছু দিনের মধ্যে মারা যাওয়া।

লক্ষণ

এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসকেরা নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি চিহ্নিত করে থাকেন:

চিকিৎসা

চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত ঔষধগুলি গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন:

acyclovir ampicillin
benzyl penicillin cefotaxime
ceftazidime pentahydrate ceftriaxone
chloramphenicol ciprofloxacin
dexamethasone doxycycline
ethambutol frusemide
gentamicin isoniazid
itraconazole lorazepam
mannitol meropenem trihydrate
moxifloxacin phenobarbital sodium
phenytoin rifampicin
streptomycin vancomycin hydrochloride
amphotericin B liposomal amphotericin B
trimethoprim + sulfamethoxazole pyrazinamide

চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত টেস্টগুলি করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন:

ব্লাড গ্লুকোজ, র‍্যান্ডম (Blood Glucose, Random)
ব্লাড ইউরিয়া নাইট্রোজেন, বি-ইউ-এন (Blood Urea Nitrogen, BUN)
ইলেক্ট্রোলাইটস, সেরাম (Electrolytes, serum)
কিডনী ফাংশন টেস্ট (Kidney function test)
লিভার ফাংশন টেস্ট (Liver function tests)
সি-বি-সি (কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট) (CBC, Complete Blood Count)
ব্লাড কালচার (Blood culture)
ইউরিন কালচার (Urine Culture)
লাম্বার পাংচার (এল-পি) (Lumber Puncture (LP))
সিটি স্ক্যান অফ হেড (CT scan of head)
ম্যাগনেটিক রেজোনেন্স ইমেজিং (এম-আর-আই) (Magnetic resonance imaging (MRI))
ভি-ডি-আর-এল কোয়ালিটেটিভ/কোয়ান্টিটেটিভ (VDRL qualitative/quantitative)
সি-এস-এফ এম/ই (CSF M/E)
সি-এস-এফ গ্রাম স্টেইন (CSF gram stain)
সি-এস-এফ এ-এফ-বি স্টেইন (CSF AFB stain)
সি-এস-এফ সি/এস (CSF c/s)

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

যে যে বিষয়গুলোর কারণে আপনার মেনিনজাইটিস হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায় সেগুলো হলো:

  • ভ্যাকসিন বা টিকা না দেওয়া।
  • ৫ বছরের কম বয়সের শিশুদের মেনিনজাইটিস হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে।  ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত এলাকায় থাকা ২০ বছরের কম বয়স্করা এই ব্যাকটেরিয়ায় বেশি আক্রান্ত হয়।
  • গর্ভাবস্থায় মহিলাদের লিসটেরিওসিস হবার ঝুঁকি বেড়ে যায়। লিসটেরিওসিস লিসটেরিয়া ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়ে থাকে। এর ফলে মেনিনজাইটিস হবার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। গর্ভাবস্থায় মহিলাদের লিসটেরিওসিস হলে গর্ভের শিশু এর দ্বারা আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে।
  •  এইডস, মাদকাসক্তি, ডায়াবেটিস এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এমন ঔষধ ব্যবহারের কারণেও মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গঃ পুরুষ ও মহিলা উভয়ের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে।

জাতিঃ শ্বেতাঙ্গ, কৃষ্ণাঙ্গ ও হিস্প্যানিকদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যান্য জাতির  মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তরঃ মেনিনজাইটিস হলো ব্রেন এবং স্পাইনাল কর্ডের পাশে অবস্থিত ঝিল্লীর (meninges) প্রদাহ জনিত ব্যাধি। এই ব্যাধিটি ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়ে থাকে। চিকিৎসা করা না হলে এই রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করে। ছত্রাক ও পরজীবীর আক্রমণের কারণেও এই ব্যাধিটি হতে পারে। চিকিৎসা করা না হলে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয় না।

উত্তরঃ চিকিৎসা করা না হলে মেনিনজাইটিস কারণে ২৪-৪৮ ঘন্টার মধ্যে রোগী মারা যেতে পারে। যদি আপনার বা অন্য কারো জ্বরসহ মাথা ব্যথা, বিভ্রান্তি, ঘাড়ে ব্যথা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

উত্তরঃ মেনিনজাইটিস সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়ে থাকে। ব্যাকটেরিয়া বিভিন্ন প্রানীর লালার মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এই জন্য পোষা জীব-জন্তুর সাথে অন্তরঙ্গ হওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রতিবার খাবার খাওয়ার পূর্বে হাত ভালোভাবে ধুতে হবে।

হেলথ টিপস্‌

বাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসার মাধ্যমে মেনিনজাইটিসের প্রভাব কমানো সম্ভব। নিম্নে এই প্রাথমিক চিকিৎসার পদ্ধতিগুলি উল্লেখিত হল-

  • জ্বর নিয়ন্ত্রণ: ঠাণ্ডা পানির কাপড় দিয়ে কপাল মোছা, ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গোসল করা এবং অ্যাসেটামিনোফেন অথবা আইবুপ্রফেন ব্যবহার করে জ্বর নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
  • মাথা ব্যাথা এবং পেশীর ব্যথা কমানো: অ্যাসেটামিনোফেন অথবা আইবুপ্রফেন ব্যবহার করে  মাথা এবং পেশীর ব্যথা কমানো যেতে পারে।
  •  পানিশূন্যতা দূর করা: পানিশূন্যতা কমানোর জন্য পানি, ফলের রস, চা ইত্যাদি পান করতে হবে। অন্যান্য খাবারের সাথেও প্রচুর পরিমাণে তরল পান করতে হবে।
  •  অসুস্থতার সময় জটিল লক্ষণগুলির উপর নজর রাখা:  দীর্ঘদিন ধরে জ্বর থাকলে জ্বরের লক্ষণগুলি খেয়াল করতে হবে। অসুস্থতার লক্ষণগুলি জটিল রূপ ধারণ করলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তার

ডাঃ লিয়াকত আলী

মেডিসিন ( Medicine)

এম বি বি এস, , এফ সি পি এস(মেডিসিন)

ডাঃ মোঃ শফিউল ইসালাম

মেডিসিন ( Medicine)

এমবিবিএস(ডিএমসি), বিসিএস , এফসিপিএস (মেডিসিন)

ডাঃ আ.ফ.ম সাইদুর রহমান

মেডিসিন ( Medicine), কার্ডিওলজি ( হার্ট) ( Cardiology), পালমোনোলজি ( ফুসফুস) ( Pulmonology)

এমবিবিএস(ডিএমসি), এফসিপিএস(মেডিসিন), ডি-কার্ড, ডিটিসিডি

লেঃ কর্ণেল ডাঃ মোঃ সফিকুল হাসান

হেপাটোলজি ( লিভার) ( Hepatology), মেডিসিন ( Medicine)

এমবিবিএস, এফসিপিএস(মেডিসিন), এফসিপিএস(গ্যাস্ট্রো) ট্রেইনি

ডাঃ সাঈদ হাসান

মেডিসিন ( Medicine)

এমবিবিএস, এফসিপিএস,(মেডিসিন), এমডি(নিউরোমেডিসিন)

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডাঃ মোঃ ছাইদুর রহমান (অবঃ)

গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি ( খাদ্যনালী, পরিপাকতন্ত্র) ( Gastroenterology), মেডিসিন ( Medicine)

এমবিবিএস,(ডিইউ), এফসিপিএস(মেডিসিন), ওজেটি (গ্যাস্ট্রো), এফএসিপি, এফআরসিপি

অধ্যাপক ডাঃ মোঃ জুলহাস উদ্দীন

মেডিসিন ( Medicine)

এমবিবিএস, এফসিপিএস, এফ আর সিপি (গ্লাসগো)

ডাঃ মোঃ নুরুল আমীন মিঞা

মেডিসিন ( Medicine)

এমবিবিএস(ডিএমসি),, এমডি(মেডিসিন),, বিসিএস(স্বাস্থ্য)