গোড়ালির মাংসপেশীতে টান বা খিঁচুনি (Ankle cramps or spasms)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

গোড়ালিতে খিঁচুনি/টান দেখা দিলে নার্ভের সমস্যাজনিত ব্যথার সৃষ্টি হয় বা কখনও কখনও এক ধরনের চাপা ব্যথার সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন কারণে গোড়ালিতে খিঁচুনি/টান দেখা দিতে পারে, যেমন- পানিশূন্যতা বা মহিলাদের মাসিক হওয়া। স্ট্রেচিং এবং মালিশেল মাধ্যমে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে  ক্রমাগত ব্যথা হলে অনেকেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে থাকে।

পায়ের পাতা বা গোড়ালীতে কোনো আঘাত পেলে আক্রান্ত  স্থানটি ফুলে যায় ও পরবর্তীতে খিঁচুনি দেখা দেয়। গর্ভাবস্থায় হরমোনজনিত পরবর্তনের কারণে শরীরে পানি আসলে শরীর ফুলে যায় এবং একই সাথে গোড়ালিতে খিঁচুনি/টান দেখা দেয়। তবে শরীরের যে অংশ ফুলে যায় সেখানে বরফ ঘষলে বা গরম সেক দিলে এবং কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে কোনো ধরনের আঘাতের কারণে যদি গোড়ালিতে টান লাগে তবে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে। কেননা এটি টেন্ডন ইনজুরি বা ফ্র্যাকচারের লক্ষণ হতে পারে।

কারণ

বারবার হাঁটাচলা ও জগিংয়ের ফলে গোড়ালিতে চাপ পড়ে ও খিঁচুনি/টান দেখা দেয়। আবার কখনও কখনও ব্যায়াম বা অনুশীলনের দীর্ঘক্ষণ পর গোড়ালিতে খিঁচুনি/টান দেখা দিতে পারে।

মাসিকের পূর্বে বা মাসিকচলাকালীন সময়ে অনেক মহিলারই পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা হয়ে থাকে। মাসিকের শুরুতে হরমোনের মাত্রায় ঘন ঘন তারতম্য দেখা দেয়, যার ফলে এই ব্যথা সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে গোড়ালিতে ধীরে ধীরে ম্যাসাজ বা মালিশ করতে হবে। একই সাথে গরম সেক বা পেইনকিলার খেলেও আরাম পাওয়া যেতে পারে।

অন্যান্য খিঁচুনির মত, পায়ের গোড়ালিতে খিঁচুনি ও ব্যথা পানিশূন্যতার জন্য হয়ে থাকে। সোডিয়াম, ক্যালসিয়ামের মত বিভিন্ন উপাদান দেহের অভ্যন্তরে পরিবহনের জন্য পানির প্রয়োজন। মাংসপেশীতে পানির ঘাটতি দেখা দিলে খিঁচুনিসহ ব্যথা সৃষ্টি হয়। একইভাবে, দেহের অভ্যন্তরে পরিবহণ ব্যবস্থায় ত্রুটি দেখা দিলে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের অভাবে দেহের স্বাভাবিক কার্যাবলী ব্যাহত হয় ও গোড়ালীতে খিঁচুনি দেখা দেয়।

সংশ্লিষ্ট লক্ষণসমূহ

এই লক্ষণের সাথে অন্যান্য যেসকল লক্ষণ দেখা যেতে পারে সেগুলো হলো:

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গ: পুরুষদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে।  মহিলাদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

জাতি: কৃষ্ণাঙ্গ ও অন্যান্য জাতির মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা  ২ গুণ। হিস্প্যানিকদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ৩ গুণ বেশি।  শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা১ গুণ কম।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তর: শরীরের প্রান্তীয় ভাগে যেমন পায়ের পাতায় রক্ত সরবরাহের পরিমাণ কমে গেলে এই ধরনের খিঁচুনি/টান দেখা দেয়। আবার দেহে পটাশিয়াম বা ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা দিলেও রাতে ঘুমানোর সময় পায়ে খিঁচুনি হতে পারে। সর্বশেষ, দিনের বেলায় ব্যায়াম বা অনুশীলম করার ফলে দেহে ল্যাকটিক এসিড উৎপাদিত হয় যার ফলে খিঁচুনি দেখা দেয়। তবে এক্ষেত্রে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহের মাত্রা হ্রাস পেয়েছে কি না তা  পরীক্ষার সাহায্যে নিশ্চিত করতে হবে। 

হেলথ টিপস্‌

গোড়ালিতে খিঁচুনি/টান দেখা দিলে নিম্নলিখিত উপায়ে এ সমস্যা নিয়ন্ত্রণে করা সম্ভব:

  • গরম পানি বা হিট প্যাডের সাহায্যে গোড়ালিতে গরম সেক দিলে পেশী শিথিল হয় ও ব্যথা কমে। একই সাথে রক্তপ্রবাহ স্বাভবিক রাখতে সাহায্য করে।
  • স্ট্রেচিংয়ের সাহায্যে খুব অল্প সময়ে পেশীর খিঁচুনি/টান নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। খিঁচুনি দেখা দিলে হালকা স্ট্রেচিং করা যেতে পারে। নিয়মিত স্ট্রেচিংয়ের মাধ্যমে এই সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব। তবে খিঁচুনি ব্যতীত মাংসপেশীর অন্য কোনো ক্ষতি/ত্রুটির জন্য ব্যথা হয়ে থাকলে স্ট্রেচিং এড়িয়ে চলতে হবে। কেননা এ অবস্থায় মাংসপেশীর আরো বেশি ক্ষতি হতে পারে।
  • নিয়মিত সুষম খাদ্যগ্রহণ দেহে ভিটামিন ও মিনারেলের ভারসম্য বজায় রাখে এবং স্নায়ু ও মাংসপেশীকে সচল ও স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। পুষ্টির অভাবে খিঁচুনি দেখা দিলে তা খাদ্যাভাস পরিবর্তনের মাধ্যমে খুব সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
  • পায়ের গঠন উপযোগী আরামদায়ক জুতা পরতে হবে। হাই হিলের স্যান্ডেল বা জুতা যতোটা সম্ভব কম পরতে হবে।
  • নিয়মিত ব্যায়াম বা অনুশীলন করতে হবে। তবে অতিরিক্ত অনুশীলন করা কখনই উচিত নয়। অনুশীলনের যেমন আগে পূর্বপ্রস্তুতির প্রয়োজন তেমনি অনুশীলন শেষে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রামেরও প্রয়োজন রয়েছে। প্রথবারের মত ব্যায়াম করে থাকলে, শুরুতেই ভারী বা অতিরিক্ত পরিশ্রম করা দরকার হয় এমন ব্যায়াম করা উচিত নয়। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার পর রক্তপ্রবাহ পুনরায় স্বাভাবিক করতে গোড়ালিসহ পায়ের নীচের অংশ বৃত্তাকারে নাড়াতে হবে যাতে পরবর্তীতে খিঁচুনি দেখা না দেয়।
  • ভিটামিন বা মিনারেলের অভাব দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ খেতে হবে।
  • গোড়ালী/পায়ের পাতায় খিঁচুনি প্রতিরোধের জন্য অনেকেই প্রতিদিন টো স্ট্রেচার ব্যবহার করে থাকেন। টো স্ট্রেচার পায়ের আঙুলের মাংসপেশী ও লিগামেন্ট সচল রাখতে সাহায্য করে ও অস্থির বিন্যাস সঠিক রাখে।