মুখ গহবরের শুষ্কতা (Mouth dryness)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

লালা দাঁতে আটকা থাকা খাদ্যকণা ও ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থেকে তৈরী হওয়া এসিড নিষ্ক্রিয় করে দাঁতকে ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে। একইসাথে লালা খাবারের স্বাদ গ্রহণ করতে ও খাবার সহজে গলধঃকরণে সাহায্য করে। এছাড়াও লালাতে উপস্থিত এনজাইম খাবার পরিপাকে সহায়তা করে।

কোনো শারীরিক অসুস্থতা বা ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলে মুখ গহ্বরে লালাগ্রন্থি হতে লালা তৈরী না হলে মুখের অভ্যন্তরে শুষ্কতা অনুভূত হয়, যা স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। যেমন এ কারণে দাঁতের ক্ষতি হয় ও খাবারের প্রতি রুচি কমে আসে। এমনকি খাদ্য গ্রহণ করলেও তৃপ্তি পাওয়া যায় না। মুখ গহ্বর শুষ্ক হয়ে যাওয়ার সমস্যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞনের ভাষায় জেরোস্টোমিয়া (Xerostomia) হাইপোস্যালাইভেশন (Hyposalivation) বলা হয়। লালাগ্রন্থি ক্ষতিগ্রস্ত হলে এ সমস্যা দেখা দেয়।

কারণ

বিভিন্ন কারণে এই লক্ষণ দেখা যেতে পারেঃ যেমন-

সংশ্লিষ্ট লক্ষণসমূহ

এই লক্ষণের সাথে অন্যান্য যেসকল লক্ষণ দেখা যেতে পারে সেগুলো হলোঃ

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

নিম্নলিখিত কারণে মুখ গহ্বর শুষ্ক হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারেঃ

  • ডায়াবেটিস মেলিটাস।
  • এ-এইচ-আই-ভি/ এইডস।
  • নির্দিষ্ট কিছু ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
  • ডিপ্রেশন বা হতাশা।
  • অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ।
  • অ্যালজেইমার ডিজিজ।
  • এ্যাডিসন ডিজিজ।
  • পানিশূন্যতা এবং লালা গ্রন্থিতে ইনফেকশন দেখা দেওয়া।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গঃ পুরুষদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। মহিলাদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

জাতিঃ কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা একগুণ কম। শ্বেতাঙ্গ, হিস্প্যানিক ও অন্যান্য জাতির মধ্যে এ লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তরঃ বিভিন্ন ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলে মুখ গহ্বরে লালা উৎপাদন কমে যাতে পারে এবং শুষ্কতা দেখা দিতে পারে। তাই যেকোনো ঔষধ ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এছাড়াও মাদক ও নেশাজাতীয় দ্রব্য ব্যবহারের ফলে এবং ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য মাথা ও ঘাড়ে রেডিয়েশন দেওয়া হলে এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। দৈনন্দিন বিভিন্ন অভ্যাস চা বা কফি পানের অভ্যাস ও বিষন্নতার কারণে এ লক্ষণ দেখা দিয়ে থাকে। শুষ্কতা প্রতিরোধে সাথে সবসময় একটি পানির বোতল রাখা উচিত যাতে কিচ্ছুক্ষণ পর পর পানি পান করা যায়। 

হেলথ টিপস্‌

এ সমস্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলি অনুসরণ করা যেতে পারে-

  • কিছুক্ষণ পর পর পানি বা সুগার-ফ্রি জুস পান করতে হবে। এছাড়াও খাবার সহজে গলধঃকরণের জন্য খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে পানি পান করতে হবে।
  • চিনিবিহীন চুয়িং গাম মুখে লালার পরিমাণ সঠিক রাখতে সাহায্য করে। তাই গালের শুষ্কভাব চুয়িং গাম চিবানো যেতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে, অতিরিক্ত চুয়িং গাম খাওয়ার ফলে ডায়রিয়া হতে পারে।
  • মুখের সাহায্যে শ্বাস না নিয়ে নাক দিয়ে শ্বাস নিতে হবে। নাক ডাকার সমস্যা থাকে বলে অসেকেই রাতে ঘুমানোর সময় মুখ হা করে শ্বাস নিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  • ঘরের আর্দ্রতা সঠিক রাখতে রুম হিউমিডিফাইয়ার ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • ঠোঁট ফাটা বা ঠোঁটের শুষ্কতা প্রতিরোধে ঠোঁটে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।

যেগুলো খাওয়া বা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবেঃ

  • অ্যালকোহল ও ক্যাফাইন। এমনকি, অ্যালকোহল যুক্ত মাউথওয়াশও ব্যবহার করা যাবে না।
  • ধূমপান ও তামাক।
  • অ্যান্টিহিস্টামিন্স (antihistamines) ও ডিকঞ্জেসট্যান্ট (decongestants) জাতীয় ঔষধ।
  • চিনিযুক্ত ও এসিডিক খাবার।

দাঁত ও মুখ গহ্বর সুস্থ রাখতে মুখের অভ্যন্তরে লালার উপস্থিতি খুবই প্রয়োজনীয়। মুখে লালার উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে ও শুষ্কতা প্রতিরোধে করণীয়ঃ

  • ফ্লোরাইড যুক্ত টুথপেস্ট দিয়ে নিয়নিত ব্রাশ এবং ফ্লস করতে হবে।
  • বছরে নিয়মিত কমপক্ষে দুইবার ডেন্টিস্টের কাছে যাওয়া উচিত।