ব্রণ/পিমপল (Acne or pimples)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

ব্রণ ত্বকের এক ধরনের সমস্যা, যা লোমকূপ তেল ও মৃত কোষ দ্বারা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে দেখা দেয়। ব্রণ সাধারণত মুখমণ্ডল, গলা, বুক এবং কাধে সৃষ্টি হয়। ব্রণের জন্য কিছু চিকিৎসা রয়েছে। তবে অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসার পরও ব্রণ বারবার দেখা দেয়। ব্রণ ধীরে ধীরে সেরে যায়, কিন্তু সাধারণত একটি ব্রণ সেরে গেলে আরেকটি সৃষ্টি হয়।

ব্রণ সাধারণত টিনএজারদের বেশি হয়।  একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী,  ৭০%-৮৭% টিনএজারদের ব্রণ হয়ে থাকে। তবে  শিশুদেরও ব্রণ হতে পারে। ব্রণের কারণে আক্রান্ত ব্যক্তি বিষণ্নতায় ভুগতে পারেন। এছাড়া এর কারণে ত্বকে দাগেরও সৃষ্টি হতে পারে। যতো দ্রুত ব্রণের চিকিৎসা করা হবে ততো এর কারণে সৃষ্ট মানসিক ও শারীরিক সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।

কারণ

বিভিন্ন কারণে এই লক্ষণ দেখা দিতে পারে:  যেমন-

চুল পড়া (Alopecia) কনট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস (Contact dermatitis)
অস্বাভাবিক খাদ্যাভ্যাস (Eating disorder) এ্যাকজিমা (Eczema)
ত্বকের ক্যান্সার (Skin cancer) সেবোরিক ডার্মাটাইটিস (Seborrheic dermatitis)
সিবাসিয়াস সিস্ট (Sebaceous cyst) ত্বকের ছত্রাকের ইনফেকশন (Fungal infection of the skin)
ক্ষতচিহ্ন (Scar) পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম (Polycystic ovarian syndrome, PCOS)
ওভারিয়ান টরশন (Ovarian torsion) সোরিয়াসিস (Psoriasis)
টেরিজিয়াম (Pterygium) সেলুলাইটিস অর অ্যাবসেস অফ মাউথ (Cellulitis or abscess of mouth)
অ্যাট্রোপিক স্কিন কন্ডিশন (Atrophic skin condition) ফাঙ্গাল ইনফেকশন অফ দি হেয়ার (Fungal infection of the hair)
ক্যালাস (Callus) ডিজহাইড্রোসিস (Dyshidrosis)
রোজেশিয়া (Rosacea) লিচেন প্ল্যানাস (Lichen planus)
লিচেন সিমপ্লেক্স (Lichen simplex) অ্যাকান্থসিস নাইগ্রিক্যানস্‌ (Acanthosis nigricans)
মোলাস্কাম কন্টাজিওসাম (Molluscum contagiosum) স্ক্লেরোডার্মা (Scleroderma)
সেবোরিক কেরাটোসিস (Seborrheic keratosis) স্কিন পলিপ (Skin polyp)
পিটাইরিয়াসিস রোজিয়া (Pityriasis rosea) ভাইরাল ওয়ার্টস (Viral warts)
প্লেগ (Plague) হরমোন ডিজঅর্ডার (Hormone disorder)
অ্যালার্জি টু অ্যানিমেলস (Allergy to animals) পেরিরেক্টাল ইনফেকশন/ অ্যানোরেক্টাল অ্যাবসেস (Perirectal infection/Anorectal abscess)
ব্রণ (Acne)

সংশ্লিষ্ট লক্ষণসমূহ

এই লক্ষণের সাথে অন্যান্য যেসকল লক্ষণ দেখা যেতে পারে সেগুলো হলোঃ

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

নিম্নলিখিত বিষয়গুলি ব্রণ হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে:

  • হরমোনের পরিবর্তন: টিনএজার, নারী এবং অল্প বয়স্ক মেয়েদের হরমোনের পরিবর্তন বেশি হয়্। এছাড়া কর্টিকস্টোরয়েড, অ্যানড্রোজেন এবং লিথিয়ামযুক্ত ঔষধ গ্রহণ করলেও ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
  • পরিবারে কারো ব্রণ থাকা: ব্রণ সৃষ্টি হওয়ার ক্ষেত্রে জেনেটিক্সের প্রভাব আছে। কোনো ব্যক্তির ব্রণ থাকলে তার সন্তানদেরও ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • চর্বিযুক্ত ও তৈলাক্ত পদার্থ: আপনার ত্বকের কোনো অংশ লোশন, ক্রিম বা চর্বিযুক্ত পদার্থের সংস্পর্শে থাকলে সেখানে ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • ত্বকে ঘর্ষণ বা চাপ লাগা: ত্বকে টেলিফোন, সেলফোন, হেলমেট, শক্ত কলার ও ব্যাগ ইত্যাদির ঘর্ষণ বা চাপ লাগার ফলে ব্রণ হতে পারে।
  • মানসিক ও শারীরিক চাপ: মানসিক ও শারীরিক চাপের কারণে ব্রণ সৃষ্টি হয় না, তবে এজন্য ব্রণ আরও বেশি তীব্র রূপে দেখা দিতে পারে।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গ: নারীদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা থাকে । পুরুষদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

জাত: কৃষ্ণাঙ্গ এবং হিম্প্যানিকদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম । শ্বেতাঙ্গ ও অন্যান্য জাতির মানুষের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা থাকে।

 

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উ: আপনার পিঠে ও কাঁধে ব্রণ হলে চিকিৎসক আপনাকে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ অথবা ট্রিটিনয়িন (tretinoin)-এর মতো বডি-ওয়াশ ব্যবহার করার পরামর্শ দিতে পারেন। এগুলি ব্রণ হওয়ার তিনটি কারণকে রোধ করে। কারণগুলি হলো- তৈল উৎপন্ন হওয়া,  লোমকূপ বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ। এছাড়া যেসব কাজ করলে শরীরে বেশি পরিমাণে ঘামের সৃষ্টি হয়, সেগুলি করার সময় আপনাকে ঢিলা কাপড় ব্যবহার করতে হবে।

উ: ব্রণের কারণে মুখমণ্ডলে সৃষ্টি হওয়া দাগ দূর করতে ৪% গ্লাইকল এসিড ব্যবহার করতে পারেন।

হেলথ টিপস্‌

কিছু প্রসাধনীদ্রব্য ব্যবহার করে এবং ত্বকের যত্ন নিয়ে মৃদু মাত্রার ব্রণ দূর করা সম্ভব। নিম্নে এধরনের কিছু পদ্ধতি  দেওয়া হলোঃ

  • আক্রান্ত স্থান পরিষ্কার করা: দিনে দুইবার  গরম পানি ও সাবান দিয়ে আক্রান্ত স্থান পরিষ্কার করুন। চুলের পাশের ত্বকে ব্রণ হলে প্রতিদিন চুলে শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। ফেসিয়াল, অ্যাসট্রিনজেন্ট (astringent) এবং মাস্কের মতো দ্রব্য ব্যবহার করবেন না কারণ এগুলির জন্যে ত্বকে অস্বস্তির সৃষ্টি হয়, যার ফলে ব্রণ আরও তীব্র রূপ ধারণ করতে পারে। ত্বক অতিরিক্ত ধোয়া এবং ডলার জন্যও সমস্যা  হতে পারে। এছাড়া আক্রান্ত স্থান  শেভ করার সময়ও সতর্ক হওয়া উচিৎ।
  • প্রসাধনী ব্যবহার: বেনজল পারঅক্সাইডযুক্ত (benzoyl peroxide) ব্রণরোধী প্রসাধনী ব্যবহার করুন। এছাড়াও আপনি সালফার, রেসরসিনল (resorcinol) অথবা স্যালিসাইলক এসিডযুক্ত (salicylic acid) প্রসাধনীও ব্যবহার করতে পারেন। চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত ব্যবহৃত এই ধরনের প্রসাধনীর কারণে ত্বকে লাল ভাব, শুষ্কতা এবং আঁশযুক্ত স্থান সৃষ্টি হওয়ার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তবে এগুলি ব্যবহারের ১ মাসের মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি কমে যায়। কিছু কিছু ব্রণরোধী লোশন, ক্লিনজার এবং অন্যান্য দ্রব্য ব্যবহারের কারণে মাঝেমধ্যে গুরুতর প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে।
  • প্রদাহ/অস্বস্তিকর দ্রব্য এড়িয়ে চলা: ব্রণ হলে তৈলাক্ত প্রসাধনী, সানস্ক্রিন ও চুলের প্রসাধনী ব্যবহার করবেন না।
  • অতৈলাক্ত ময়েশ্চারাইজারের সাথে সানস্ক্রিন: রোদের কারণে কিছু কিছু ব্যক্তির ত্বকে ব্রণ তীব্র রূপ ধারণ করে। ব্রণরোধী কিছু ঔষধ গ্রহণের জন্য রোদ ত্বকের জন্য আরও বেশি ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। আপনি এমন কোনো ঔষধ ব্যবহার করলে এ ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এছাড়া সব সময় রোদ এড়িয়ে চলার চেষ্ট করুন। এমন কোনো অতৈলাক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন যাতে সানস্ক্রিন থাকে।
  • সংস্পর্শের ব্যাপারে সতর্ক হওয়া: চুল এবং মুখমণ্ডল পরিষ্কার রাখুন। এছাড়া টেলিফোন রিসিভারের মতো বস্তু মুখমণ্ডলের সংস্পর্শে আনা থেকে বিরত থাকুন। যদি আপনার শরীরে ঘাম হয় তাহলে আঁটোসাঁটো পোশাক পরবেন না। ঘাম ও তৈলাক্ত পদার্থের জন্য ব্রণ সৃষ্টি হতে পারে।
  • ব্রণ চাপা বা খোঁটানো থেকে বিরত থাকা: ব্রণ চাপা বা খোঁটানোর জন্য ইনফেকশন ও দাহের সৃষ্টি হতে পারে।